নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও বাড়েনি জনবল। মাত্র সাতজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে সাত লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা। জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৯টি পদের মধ্যে আছে মাত্র ২৬। ডাক্তার-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫৩টি পদ। ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ জন। তার মধ্যে উপস্থিত থাকেন মাত্র সাতজন চিকিৎসক। ৩০ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১৩ জন। মিডওয়াইফ তিনজন থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। তিনজন সিকিউরিটি গার্ডের মধ্যে নেই একজনও। তিনজন ওয়ার্ড বয়ের মধ্যে আছেন দুইজন। অন্যদিকে আয়া দুইজন থাকার কথা হলেও আছেন এক জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা গেছে, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি থাকলেও চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকটের কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও ইসিজি প্রভৃতি যন্ত্রপাতিগুলো অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে। ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন আউটডোরে গড়ে সাড়ে তিনশোর বেশি রোগী আসে, শয্যাগুলোতে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। রোগীদের সেবা দিতে কর্তৃপক্ষের খুবই সমস্যা হয়। শয্যা সংখ্যা একশতে উন্নীত করার এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিনের।

চরকিং ইউনিয়ন থেকে আসা রাহেলা বেগম বলেন, আমাদের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাইসি সুস্থ করার জন্য। কিন্তু উল্টো অসুস্থ হয়ে যায়। ডাক্তারকে আসতে বললে আসে না। উল্টো আমাদের সঙ্গে রাগ করে।

আবদুর রহমান নামে চিকিৎসা নিতে আসে আরেকজন হাতিয়ার বাসিন্দা বলেন, আমরা সাত লাখ মানুষ এই দ্বীপে বসবাস করি। আমাদের একমাত্র ভরসার স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যদিও এটা পুরাতন ভবন। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে এটাকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করা হয়েছে। এটাকে যদি নতুন করে করা হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়৷

মোমিন ইসলাম নামের আরেক রোগী বলেন, এখানে পর্যাপ্ত সিট নেই। ভাল ডাক্তার নাই। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। দ্বীপ উপজেলা হওয়ায় এখান থেকে সহজে অন্য কোথাও চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগও নাই। নতুন ভবন হলে আমাদের জন্য ভাল হতো। চিকিৎসক নিয়োগ দিলে আমাদের উপকার হতো।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় হাতিয়ার ৭ লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল অপ্রতুল বলে ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছি৷ এছাড়াও এটিকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। তবে যদি আমাদের সাগরিয়া, বুড়িরচর বা জাহাজমারা ইউনিয়নের দিকে আরেকটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করা হয় তাহলে আমাদের উপকার হবে। সেদিকে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা বলেন, সাত লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার জায়গা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেটি পূর্বে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ছিল। ৩১ থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও গড়ে শতাধিক ভর্তি রোগী ও বহিঃবিভাগের পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা চিকিৎসক আছেন মাত্র সাতজন। ৩১ শয্যার অবকাঠামো থাকার কারণে রোগীদের ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া লাগে। যা সত্যিই মানবেতর। আশা করব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে সাত লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করবেন।

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকীবলেন, হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এটি জনসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এই উপজেলা বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হওয়ায় চাইলেই বাহিরে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা যদি পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে দিতে পারি তাহলে সাধারণ মানুষের খুব উপকার হবে। তাছাড়া এখানে প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। যেটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যা সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হয়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে যদি ১০০ বা ২০০ শয্যায় করা যায় তাহলে সাধারণ জনগণ আরও বেশি উপকৃত হবে। সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি জানিয়েছি।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, মূল ভূখণ্ডের বাইরে হাতিয়ার দ্বীপের একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি এবং সংসদেও কথা বলেছি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে। ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় করতে পারি তাহলে রোগীদের কষ্ট হবে না এবং চিকিৎসক সংকট হবে না।

Sharing is caring!