নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প- ব্রিজিংয়ের (সিডিএসপি-বি) উদ্যোগে ভূমিহীন ২৪০ পরিবারের মাঝে প্রায় ৩৬০ একর কৃষি খাস জমির খতিয়ান বিতরণ করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে উপজেলার যোবায়ের বাজারের এসএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব পরিবারের সদস্যদের হাতে জমির খতিয়ান তুলে দেওয়া হয়।

উপকারভোগী বিধবা বিবি হালিমা বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল দক্ষিণ হাতিয়া। ৫ বার আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নদীতে বিলীন হয়েছে। আজ ভূমির খতিয়ান পেলাম। এখন আর কেউ আমাকে ভূমিহীন বলবে না। ভূমিহীন থেকে আজ ভূমির মালিক হলাম। শেষ জীবনে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো।

আরেক উপকারভোগী জয়নাল আবেদিন বলেন, আজকে আমাদের আনন্দের দিন যা কখনো ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। খুব সহজে দালাল মুক্ত ভোগান্তি বিহীন খতিয়ান হাতে পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও সুবর্ণচর উপজেলা প্রশাসন এবং সিডিএসপি-ব্রিজিং প্রকল্প’সহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

সুবর্ণচর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল আমিন সরকার বলেন, আমাদের পুনর্বাসিত প্রক্রিয়ায় একজন ভূমিহীনের খরচ হয়েছে ৭০১ টাকা। আজ ২৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমাদের এই উপজেলায় ২০০০ অসহায় ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। খুব দ্রুতই অবশিষ্ট ২০ শতাংশ কাজ শেষ হবে। একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধ পরিকর।

সিডিএসপির টিম লিডার এন্ড্রো জেনকিন্স বলেন, ভূমিহীনদের জন্য আজকের দিনটা খুব আনন্দের। তাদের সাথে আমিও আনন্দিত। এতদিন তারা ভূমিহীন ছিলেন আজ ভূমির মালিক হলেন। আমি এর আগেও ভূমিহীনদের নিয়ে কাজ করেছি। আজ তারা ভূমির মালিক হলেন, সেইজন্য আমি খুবই খুশি।

নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর থিজস ওয়েদস্ত্রা বলেন, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট (সিডিএসপি) মেঘনা নদীর এস্তুয়ারিন অঞ্চলের সমগ্র প্রাকৃতিক দৃশ্যকে বদলে দিয়েছে, ভূমিহীনদের জীবনযাত্রাকে রূপান্তরিত করেছে, ক্ষমতায়ন করেছে নারীদের এবং বাংলাদেশে পাঁচটি মন্ত্রণালয় নিয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়নের সমন্বিত অভিগমন করেছে। দূতাবাস খুশি যে আমরা এই প্রকল্প ১৯৯৪ সালে শুরু করেছিলাম এবং এখন সরকার আর্থিক সহায়তার জন্য আইএফএডির সাথে একটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা, মালিকানা, অংশীদারিত্ব গ্রহণ করছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায় বলেন, ভূমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই, স্বাবলম্বী ও আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকার এ খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ জমি উত্তরাধিকার সূত্র ব্যতীত অন্যত্র হস্তান্তরযোগ্য নয়। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশীদারীত্বের মাধ্যমে এ বন্দোবস্তকৃত ভূমি ব্যবহার করে সুখি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমরা ভূমিহীন শুনানি, কবুলিয়ত রেজিষ্ট্রেশন সব কাজই স্থানীয় বাজারে করেছি। এর ফলে ভূমি অফিসে কারও আসার প্রয়োজন হয়নি। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করেই এসব খতিয়ান বিতরণ করা হয়েছে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমিহীন পরিবারের মাঝে খাস জমির খতিয়ান বিতরণ এই সরকারের একটি অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার কর্মসূচি। ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার আলোকে চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প নোয়াখালীর প্রত্যন্ত চর এলাকায় ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাসজমি বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত প্রাপ্ত প্রতিখণ্ড খাস জমি যথাযথভাবে ব্যবহার ও চাষাবাদ করে সর্বোচ্চ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে নিজ পরিবার ও দেশকে স্বনির্ভর করার আহ্বান জানাচ্ছি।

এ সময় উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প- ব্রিজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার সায়িদ আহমেদ, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অশোক বিক্রম চাকমাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

Sharing is caring!