নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নে অগ্নিকাণ্ডে দিনমজুর মো. বেলাল মিয়ার (৭০) বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ৭ নং ওয়ার্ডের গোলাম মাওলা চৌধুরী বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মৃত মায়ের মিলাদের জন্য রাখা নগদ টাকা-বাজারসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি দিনমজুর বেলাল মিয়ার।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলাল মিয়ার মাকে দাফন করা হয়। আগামী বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তার মায়ের দোয়ার জন্য মিলাদ পড়ানোর কথা ছিল। গতকাল শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুরাতন বাড়িতে কোরআন খতম পড়ানো হচ্ছিল। এ সময় বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় এবং মুহুর্তের মধ্যে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মাইজদী ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হন। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

দিনমজুর বেলাল মিয়া বলেন, আমার মায়ের দোয়ার জন্য আমরা পুরাতন বাড়িতে কোরআন খতম করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি আমাদের ঘরে আগুন লেগেছে। এসে দেখি পুরো ঘরে আগুন। থামানোর কোনো ব্যবস্থা নাই। আমার মায়ের মিলাদের জন্য মানুষ কিছু টাকা দিয়েছে, আমার মেয়ের জামাইয়ের সিএনজি বিক্রির ৬০ হাজার টাকা ছিল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি।

বেলাল মিয়ার বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার দাদি মারা গেছেন তাই আমরা দুই বোন স্বামী সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে আসছি। বাড়িতে আমার বাবা-মা, ভাই-ভাবিসহ সাতজন থাকেন। শোকের ভেতর আমাদের আরেক শোক। ঘরে থাকা রান্নার চালসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা এখন নিঃস্ব পরিবার। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নাই।

স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, নদী ভাঙলে ত ঘরের মালামাল সরিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু আগুনে পুড়লে সব শেষ হয়ে যায়। বেলাল মিয়ার সব ছাই হয়ে গেছে। তার স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে আছেন। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। এ পরিবারের পাশে বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নোয়াখালীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার কবির হোসেন বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। আমরা খবর পেয়ে একটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হই।

নোয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা ইয়াসিন আরাফাত বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমি আজ বিকেলে গিয়ে তাদের খোলা আকাশের নিচে তাদের দেখেছি। আগুনে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমি ২৫ হাজার টাকার অনুদানের চেক দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন। সরকারি কোনো সুবিধা পাওয়া গেলে বেলাল মিয়াকে দেওয়া হবে।

Sharing is caring!