৪ মাসের ছেলের মুখটা প্রথমবার দেখতে ঈদের পর বাড়ির ফেরার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী সোহাগের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখন পরিবার তার মরদেহের অপেক্ষায় দিন গুণছে। স্বামীর মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন সোহাগের স্ত্রী আখি আক্তার (২২)।

তিনি চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন, আমার স্বামীকে ফিরাইয়া দেন। আমগো সন্তানের কি হইবো। আল্লাহ আপনি একি করলেন। ৪ মাসের হাবিব তার বাবাকে দেখে নাই। ঈদের পর বাড়ি আসবেন কইসিলেন। আল্লাহ এ আপনি কি করলেন।

রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ব্রি স্ট্রিটে ডাকাতের গুলিতে নিহত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নজিরপুর গ্রামের সোহাগের বাড়িতে। শিশু হাবিবকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন চাচা ও ফুপুরা। সোহাগের বৃদ্ধ বাবা-মা বাকরুদ্ধ। আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সমবেদনা জানাচ্ছেন।

নিহত সোহাগের বড় ভাই বেলাল হোসেন বলেন, গত রমজানে ছুটি শেষে সোহাগ আফ্রিকায় যায়। কিছুদিনের মধ্যেই আবার তার শিশু সন্তানকে দেখতে আসার কথা। গতরাতে খবর আসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সোহাগ নিহত হয়েছে। তারপর থেকে ঘরের সবাই মূর্ছা যাচ্ছেন। তার ৪ মাসের ছেলেও অঝোরে কান্না করছে।

সোহাগ নজিরপুর গ্রামের কোব্বাদ মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সোহাগ। ১০ বছর আগে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঋণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা যান সোহাগ। ২০২০ সালে দেশে এসে পাশ্ববর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের আব্দুল মতিনের মেয়েকে বিয়ে করেন। ৪ মাস আগে তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। যার না রাখা হয় হাবিব উল্লাহ।

সোহাগের শ্বশুর আব্দুল মতিন বলেন, আমার নাতিকে তার বাবাকে এক নজর দেখাতে চায়। জামাইয়ের মরদেহ দেশে আনতে চাই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মরদেহ দেশে আনার সহযোগিতা চাই।

নাটেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন খোকন বলেন, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গিয়ে সোহাগ আজ কফিনে বন্দী। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার মরদেহ আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

শনিবার (১ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাত ৮টায় দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ব্রি স্ট্রিটের ‘নোয়াখালী সুপার মার্কেটে’ অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা দোকানে ডাকাতি শেষে যাওয়ার পথে সোহাগকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তার মরদেহ হিলব্রু ক্লিনিকে রাখা হয়েছে।

Sharing is caring!