প্রচণ্ড বেগে চট্টগ্রামের উপকূলে আছড়ে পড়ে দাপট কমেছে ঘূর্ণিঝড় হামুনের। যার রেশে গত দুদিন ধরেই নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় টানা বৃষ্টি ও মৃদু হাওয়া চলছিল। তবে বৃষ্টি থেমে বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। সূর্যের হাসিতে জনমনে ফিরেছে স্বস্তি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় হামুন উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং দুর্বল হয়ে সাতকানিয়া, চট্টগ্রামে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরও অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এই সিরিজে আর কোনো আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মেহেদী হাসান হৃদয় বলেন, ভোর থেকে পরিবেশ স্বাভাবিক। সূর্যের দেখা মেলায় সবাই খুব আনন্দিত। গত দুই দিন টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে কোনো কাজ করা যায়নি। তাই বৃষ্টি থামতেই সবাই স্বাভাবিক কাজে নেমে পড়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন বলে লাখো শুকরিয়া।

হাতিয়ার আফাজিয়া বাজারের বাসিন্দা মো. জুয়েল বলেন, আফাজিয়া বাজার হাতিয়ার বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র। সকাল থেকে স্বাভাবিক হওয়ায় এখানে ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে সকল কাজ হচ্ছে। নদী উত্তাল নেই। সব কিছুই আমাদের অনূকূলে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় হামুন থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে এই দ্বীপের অসহায় লাখো মানুষ।

হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক মানুষ এসেছে। আমরা তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানিসহ খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। ভোরে আকাশ পরিষ্কার দেখে সবাই বাড়ি ফিরে গেছে। আমাদের এখানে বর্তমানে আকাশ স্বাভাবিক রয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমাদের এই দ্বীপে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষ গুলোকে খাবার দিয়েছি। সবাই বাড়ি ফিরিছেন। কোনো সতর্ক সংকেত না থাকায় হাতিয়ার সাথে সারাদেশের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দ্বীপে যারা আটকা পড়েছেন তারা দ্বীপ থেকে বাইরে যেতে পারবেন এবং যারা দ্বীপে আসতে পারছিলেন না তারাও দ্বীপে আসতে পারবেন।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল। সতর্কতার জন্য আমরা সরকারের সকল নির্দেশনা বাস্তবায়নে শতভাগ চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে আমাদের নোয়াখালীর উপকূলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সূর্যের দেখা মেলায় জনমনে স্বস্তি এসেছে। মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজ কর্ম করছেন।

Sharing is caring!