এনকে টিভি ডেস্ক:

 

তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও নগরায়ণের কারণে শিশুদের পেয়ে বসেছে আলস্য। ১১-১৭ বছর বয়সী প্রতি ৫ শিশুর ৪ জনই দিনে অন্তত ১ ঘণ্টার পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করছে না। যা শতকরা হিসেবে ৮৫ ভাগ মেয়ে ও ৭৮ ভাগ ছেলে। এই সমস্যা উন্নত ও অনুন্নত সব দেশেই রয়েছে।

 

সম্প্রতি মেডিক্যাল সাময়িকী ল্যান্সেট চাইল্ড অ্যান্ড এডোলেসেন্ট হেল্থ-এ প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৪৬ দেশের শিশু-কিশোরদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

তবে প্রতিবেদন অনুসারে, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো করেছে বাংলাদেশ। যদিও শতকরা ৬৬ ভাগ ছেলেমেয়ে দৈনিক এক ঘণ্টা শারীরিক কসরতের কোটা পূরণ করতে পারেনি।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ফিলিপাইন্স এর ছেলেরা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েরা। দেশদুটি শতকরা ৯৩ ও ৯৭ ভাগ ছেলেমেয়ে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমে নিষ্ক্রিয়। তালিকায় লক্ষণীয় বিষয় হলো, টোঙ্গা, সামোয়া, আফগানিস্তান ও জাম্বিয়ার মেয়েরা দেশগুলোর ছেলেদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম।

তবে আশার বিষয় হলো ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের তথ্যের জরিপে ল্যাসেন্ট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট হেলথ কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সে সময় বিশ্বব্যাপী শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ছেলেদের ছিল শতকরা ৮০ ভাগ, মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮৫ ভাগ। বর্তমানে সচেতনার তৈরি হওয়াতে এক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার চাপ। ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনটির এক লেখক লিয়ানে রাইলি বলেন, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের পরীক্ষার জন্য প্রচুর পড়াশোনার চাপ দেয়া হয়। কঠোর পরিশ্রম করতে বলা হয়। কখনো কখনো লম্বা সময় ধরে তাদের স্কুলে বসিয়ে রেখে ‘হোমওয়ার্ক’ করানো হয়। তারা শারীরিকভাবে সক্রিয় হওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না। এছাড়া, নিরাপদ, সহজলভ্য খেলা ও অবসর যাপনের জন্য স্থাপনার অভাবও শিশুদের শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী। পাশাপাশি ফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারে ডিজিটাল খেলার উত্থান বাইরে খেলা কমিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

শিশুদের জন্য নির্ধারিত সময় বেশি কিনা এমন প্রসঙ্গ টেনে ডব্লিউএইচও’র ড. ফিয়োনা বুল বলেন, আমি মনে করি না এটা কোনো হাস্যকর টার্গেট। সুস্বাস্থ্য গঠন ও বিকাশের জন্য এ পরিমাণ চর্চার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যথাযথ প্রমাণ রয়েছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, পর্যাপ্ত শারীরিক চর্চা না করলে শিশুদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি স্বাস্থ্যেরই। কিশোরকালে শারীরিকভাবে স্বক্রিয় থাকলে তা পরবর্তী জীবনে সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়তা করে। স্বক্রিয় বলতে, সুস্থ হৃৎপি-, সুস্থ ফুসফুস, শক্ত হাড় ও পেশি, উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য ও কম ওজন থাকাকে বোঝায়।

ডব্লিউএইচও’র ড. রেজিনা গুথোল্ড বলেন, কিশোরকালে সক্রিয় থাকলে তা পরবর্তী জীবনে হৃদরোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস সহ বহু রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এছাড়া গবেষকরা বলছেন, মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও তা ভূমিকা রাখে। গুথোল্ড বলেন, অল্প বয়সে শারীরিকভাবে স্বক্রিয় থাকা শিশুদের শেখার ক্ষমতা, সামাজিক দক্ষতা অর্জন অন্যান্যদের তুলনায় উন্নত হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল

Sharing is caring!