নোয়াখালীর সেনবাগে পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামী মো. মঈন উদ্দিনকে (৪৫) হত্যা করেন স্ত্রী রজ্জবের নেছা রিনা (৩৫)। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইন জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইন ১৬৪ ধারায় আসামি রজ্জবের নেছা রিনার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ডের পর আসামিকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. শাহ আলম বলেন, সেনবাগ উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণকাটা গ্রামের ফকির বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. মঈন উদ্দিন নিহতের ঘটনায় তার মা রাহেলা আক্তার (৬০) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সেনবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনার ১৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। গ্রেপ্তারকৃত স্ত্রী স্বেচ্ছায় আদাল‌তে তার স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকা‌র ক‌রে ১৬৪ ধারায় জবানব‌ন্দি দেন। তার জবান‌বন্দির পর হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে। তবে ঘাতক পরকীয়া প্রেমিক এখনো পলাতক রয়েছেন।

সেনবাগ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, গত রোববার (৬ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে সোমবার (৭ আগস্ট) রাতে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের মা মামলা করলে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে জানা যায় নিহতের স্ত্রী নিজেই তার পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

ওসি আরও বলেন, নিহত মঈন উদ্দিন তার ব্যবসার কাজে প্রায়ই চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। এ সুযোগে গত ২-৩ বছর ধরে তার স্ত্রী রজ্জবের নেছা বাড়ির পাশের মো.মাসুদ নামে এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দেয়। একপর্যায়ে বছর খানেক আগে রজ্জবের নেছাকে তার স্বামী ডিভোর্স দিয়ে দেন। ডিভোর্স দেওয়ার ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবে বাবার বাড়ি চলে যায়। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান থাকায় তাদের দিকে তাকিয়ে তাকে পুনরায় সামাজিকভাবে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আসার পরও তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেনি।

এরপরও বিভিন্ন সুযোগে তিনি পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক চালাতে থাকেন। স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক মাসুদের সঙ্গে নিহত মঈন উদ্দিনের বড় ধরনের শক্রতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ একাধিকবার রজ্জবের নেছার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেন। মঈন উদ্দিন বাড়িতে এলে বিষয়টি সহ্য করতে পারতো না পরকীয়া প্রেমিক। এই জন্য তাকে মেরে ফেলার জন্য তার স্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন তিনি। ৩-৪ দিন আগে এই নিয়ে পরকীয়া প্রেমিকসহ পরিকল্পনা করেন রজ্জবের নেছা।

ওসি বলেন, মঈন গ্রামের বাড়িতে এলে নিয়মিত গরুর দুধ পান করতেন। ঘটনার আগের দিন পরকীয়া প্রেমিক রজ্জবের নেছাকে ১৪-১৫টি ঘুমের ওষুধ দেন। গত রোববার রাত ৯-১০টার দিকে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তিনি তার স্বামীকে সবগুলো ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। এতগুলো ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ ও রজ্জবের নেছা তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির উঠানে নিয়ে মাথায় কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে বাড়ির উঠানে স্বামীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে ঘরে ঢুকে উল্টো নাটক সাজায় ঘাতক স্ত্রী।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়েন। আমি নিজেও সেনবাগে যাই। নিহতের স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর হত্যার রহস্য বের হ‌য়ে আসে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত পরকীয়া প্রেমিক মাসুদকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Sharing is caring!