এনকে টিভি ডেস্কঃ

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাবার পটভূমিতে সরকার বলছে, চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গত মাস থেকে যথেষ্ট পরিমাণে পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুয়িপমেন্ট – পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে এবং সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই মজুদ আছে।

 

অন্যদিকে, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিদিনই হাসপাতালে পিপিই’র অভাবের কথা জানাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবাকর্মীরা।

 

এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও বক্তব্যের সমালোচনা করায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিতরণ করা সুরক্ষা সরঞ্জামাদি কাদের দেয়া হচ্ছে?

 

কারা পাচ্ছেন পিপিই?

বাংলাদেশে সরকার বলছে, চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গত মাস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই সরবারহ করা হয়েছে এবং সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুরক্ষা সরঞ্জাম মজুদ আছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের পিপিই দেয়া হচ্ছে।

 

তবে এক্ষেত্রে সরকার সরাসরি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষা করা এবং তার চিকিৎসায় নিযুক্ত ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

 

“পিপিই দেয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কে কোন্‌ পর্যায়ে কাজ করছে তার ওপরে। এবং সেক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা মেনে আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে সরকারের প্রায়োরিটি হচ্ছে যারা কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা যারা করছেন, তাদের পিপিই দেয়া। ফলে যে সব হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে দেয়া।”

 

তবে এক্ষেত্রে, সুরক্ষা সরঞ্জাম পাওয়া নিয়ে চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের অসন্তোষ আছে, সেটি স্বীকার করেন অধ্যাপক তাহমিনা।

 

তিনি বলেন, “চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ আছে, তার কারণ হচ্ছে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে এসে তথ্য গোপন করেন। কারো মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার উপসর্গ আছে বা তিনি কোভিড-১৯ কোন রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন তথ্য লুকিয়ে রেখে চিকিৎসা নিতে আসেন অনেকে।

 

ফলে চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিক উদ্বেগ আছে, যে কারণে তারা চান সবাইকে পিপিই দেয়া হোক।”

 

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন আট হাজারের মত পিপিই লাগে, এবং প্রতিটি নমুনার জন্য চারটি পিপিই লাগে।

 

মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসকেরা কী বলছেন?

 

বাংলাদেশে চিকিৎসক ও সেবাকর্মীরা বলছেন দেশের সরকারি হাসপাতালে, এমনকি যেসব হাসপাতালে পৃথক করোনা ইউনিট রয়েছে সেখানেও পিপিই বা সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি পূর্ণাঙ্গ পিপিই সেটের মধ্যে মোট পাঁচটি উপকরণ থাকতে হয়।

 

এর মধ্যে রয়েছে গাউন, গ্লাভস, ফেস শিল্ড বা মুখ ঢাকার আবরণ, চোখ ঢাকার জন্য মুখের সাথে লেগে থাকে এমন চশমা, এবং মাস্ক।

 

উপজেলা পর্যায়ে একটি সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কাজ করেন এমন একজন চিকিৎসক বলছেন, তাদের হাসপাতালে ডাক্তার ও সেবাকর্মীদের প্রত্যেককে একবার ব্যবহারযোগ্য গাউন দেয়া হয়েছে, কিন্তু বাকী সরঞ্জামাদি নিজেদের উদ্যোগে ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

 

“গাউনের সরবারহ আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু ধরুন গ্লাভস কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ছিল, এখন হাসপাতালে গিয়ে সেটা পাওয়া যায় না। তখন নিজেদের কাছে যা আছে, তা দিয়ে কাজ চালাতে হয় আমাদের। এছাড়া আমরা এন-৯৫ মানের মাস্কও পাইনি। তাছাড়া যে সার্জিক্যাল মাস্ক আসছে সেগুলোর মান নিয়েও আমরা সন্দিহান।”

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দেয় এফএফপি-৩ অথবা এন-৯৫ অথবা এফএফপি-২ মাস্ক।

 

পিপিই’র মান নিয়ে প্রশ্ন

 

বাংলাদেশে এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিপিই হিসেবে যা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো করোনাভাইরাসের মত অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস ঠেকাতে কতটা সক্ষম তা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।

 

চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের বড় অংশের অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রে পিপিই’র পুরো সেট প্রদান করা হচ্ছে না।

 

আবার অনেক ক্ষেত্রে পিপিই যেসব উপাদান দিয়ে বানানো হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

 

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন ভাইরাস ঠেকাতে এগুলো পুরোপুরি কার্যকর নয়।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, এখন পর্যন্ত সরকারের দেয়া সুরক্ষা সরঞ্জাম ভাইরাস ঠেকাতে শত ভাগ কার্যকর নয়।

 

“আমি মনে করি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো পুরো সুরক্ষা দিতে পারছে না। আমাদের এখন প্রচুর পরিমাণে এন-৯৫ মাস্ক লাগবে, যা খুবই অপ্রতুল। শুধু যারা রোগী দেখবেন তারাই নন, যারা এমনকি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন তাদেরও এ মাস্ক দিতে হবে।”

 

তবে, পিপিই’র মান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেকজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা রোববার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং এ জানিয়েছেন, মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে মান যাচাই করে সেগুলো সরবারহ করা হচ্ছে।

 

তিনি দাবি করেন, সকল সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে।

 

এনকেটিভি/হাসিব

Sharing is caring!