এ সময় তিনি সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যদের কাছে সেই রাতে তার ওপর সংঘটিত নির্যাতনের বিবরণ দেন।

আরিফুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার রাত ১২টার পর খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। তখন একজন বাইর থেকে বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেন। পরিচয় জানতে চাইলে কেউ পরিচয় জানান নি। পরে আমি সদর থানার ওসিকে ফোন দেই। ফোন দেওয়ার কথা শুনে বাইরে থাকা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নিজাম উদ্দিনের  নেতৃত্বাধীন লোকজন দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ঘরে ঢুকেই আরডিসি নিজাম উদ্দিন আমার মাথায় কিল-ঘুষি মারতে শুরু থাকেন।মারতে মারতে আমাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চোখ-হাত-পা  বেঁধে ফেলা হয়। এরপর আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টারে দিতে চায়। আমাকে বারবার বলে, তুই কলেমা পড়ে ফেল, তোকে এনকাউন্টারে দেওয়া হবে।

আরিফ বলেন, এ সময় আমি তাদের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। আমি আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই। বলি, আমার বাবা-মা নেই, আমার দুটি সন্তান আছে। আমাকে যেন না মেরে ফেলা হয়। আমার বাচ্চা দুটি এতিম হয়ে যাবে। আমি আল্লাহর কসম দিয়ে, সন্তানের কসম দিয়ে জীবন ভিক্ষা চাই, কাকুতি মিনতি করি।

পরে তারা আমাকে গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে যায়। আমি  চোখের কাপড় একটু খুলে বুঝতে পারি এটা ডিসির কার্যালয়। আবার নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে বিবস্ত্র করে  বেধড়ক মারধর করে এবং ভিডিও করে। তারা যে আমাকে নির্যাতন করেছেন তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে আছে। অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করা হয়। এ সময় নিজাম উদ্দিন বারবার আরেকজনকে বলছিলেন, ডিসি স্যারকে ফোন দাও, মেসেজ দাও। কী করবো সেটা বলতে বলো।

আরিফ আরও বলেন, আমি বারবার জানতে চেয়েছি, আমার অপরাধ কী? তখন নিজাম উদ্দিন বলেন, তুই আমাদের অনেক জ্বালাচ্ছিস।  তোকে সাংবাদিকতা শেখাবো। এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটি কাগজে সিগনেচার নেয়। রাতেই আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আমাকে কেন কারাগারে পাঠানো হলো এবং কেন ধরে আনা হলো কিছুই বলা হয়নি। এমনকি কারাগারে আমার সঙ্গে এক মাস কেউ  যেন সাক্ষাৎ করতে না পারে এবং আমার যেন চিকিৎসা হয়, এজন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষ একটি কাগজ দিয়ে বলে, তোমার পরিবার পাঠিয়েছে ওকালতনামা। সেখানে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আমি জানি না, কে বা কারা ওকালতনামা পাঠিয়েছে। বাইরে এসে জানতে পারলাম আমার পরিবারের সদস্যরা কেউ জামিন আবেদনের জন্য ওকালতনামা পাঠায়নি।

আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেন, মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পিটিয়ে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে।

এনকেটিভি/হাসিব আল আমীন

Sharing is caring!