উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা পাস করেই বনে গেলেন মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতারণা করছেন অসহায় রোগীদের সঙ্গে।

শনিবার (২৯ জুলাই) রাত ৮টার দিকে নোয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে নুরুল হাসান (৫০) নামে এক ভুয়া মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে আটক করে পুলিশের সোপর্দ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

আটক নুরুল হাসান নিজেকে বগুড়ার সদর উপজেলার ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে বলে দাবি করেন। সে অনুযায়ী একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও রয়েছে। তবে পুলিশের তথ্য মতে, নুরুল হাসানের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক নুরুল হাসান স্বীকার করেন, তিনি কেবল এইচএসসি পাস করেছেন। কোনো প্রকার চিকিৎসক সনদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতাও তার নেই। তিনি গত কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনায় একটি মামলা রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, আটক নুরুল হাসান ২০২০ সাল থেকে মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নোয়াখালীর গুডহিল হসপিটাল কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে চেম্বার করে আসছিলেন। এর আগে তিনি কক্সবাজারে চেম্বার করতেন। রোগীদের দেওয়া ওষুধ এবং রিপোর্ট নিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সন্দেহ তৈরি হয়। নুরুল হাসানের দেওয়া হৃদরোগের ইকো রিপোর্ট নিয়ে অপারেশন করে অনেক রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবু তাহের তার কিছু ভুল রিপোর্ট দেখলে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে কৌশলে মাইজদীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ডেকে আনেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বিএমডিসি সনদ যাচাই-বাছাইয়ের এক পর্যায়ে তার সনদগুলোতে ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। একপর্যায়ে তিনি নিজে এসব সনদ ভুয়া বলে স্বীকার করলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তিনি আগে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালেও এসব ভুয়া সনদে চেম্বার প্র্যাকটিস করতেন বলে জানা যায়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডা. আবু তাহের বলেন, নুরুল হাসান একজন প্রতারক। সে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। তার সকল কাগজপত্র ভুয়া। গতকাল জানতে পেরেছি তার বিরুদ্ধে থাকা একটি মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন একই নামের আরেকজন চিকিৎসক।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নুরুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে আমরা তাকে ডেকে এনে সনদগুলো পরীক্ষা করার পর তিনি ভুয়া বলে প্রমাণিত হন। তিনি জানিয়েছেন বিএমডিসির নম্বরটি ঠিক থাকলেও একই নাম ও নম্বর ব্যবহার করে সনদটি তিনি অসাধু উপায়ে বানিয়ে নিয়েছিল। তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের অফিসের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করবেন।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভুয়া সনদে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে থানায় হস্তান্তর করেছে। তার নামে একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও আটক নুরুল হাসানের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে জয়পুরহাট থানায় একটি মামলা রয়েছে।

Sharing is caring!