ই-পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার সিল বাদ দেয়া হয়েছে। ‘ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’ কথাটি আর পাসপোর্টে লেখা থাকবে না। এখন লেখা থাকবে ‘এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’।

এই সিদ্ধান্তে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। এর জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা আগে যে অবস্থানে ছিলাম সেই অবস্থানেই আছি। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, পাসপোর্টে আন্তর্জাতিক মান রাখতে গিয়ে এই পরিবর্তন করা হয়েছে।

রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশী ই-পাসপোর্টের ‘আন্তর্জাতিক মান’ বজায় রাখার জন্য ওই অংশে পরিবর্তনটি আনা হয়েছে। বাংলাদেশে পাসপোর্টধারীদের ইসরাইলে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিতই থাকছে। জানা গেছে, পাসপোর্টের এই পরিবর্তন সম্পর্কে সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রায় এক বছর আগে। অতীতে পাসপোর্টে ইসরাল ছাড়া পৃথিবীর সব দেশে ভ্রমণের জন্য ব্যবহারের যে সতর্কবার্তা ছিল।

এক বছর আগের এই সিদ্ধান্ত এখন ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এটা নিয়ে বিতর্ক বা গুঞ্জন কোন কিছুই থাকাটা বাঞ্চনীয় নয়। এটা অনেক আগেরই সিদ্ধান্ত। এটা তো সত্য যে- আমাদের সংবিধানেই আছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। দেশের স্বার্থে এটা করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টে পরিবর্তন এলেও এমআরপিতে তা আগের মতোই থাকছে। এক সময় তো-বাংলাদেশী নাগরিকদের পাসপোর্টে লেখা থাকত- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরাইল, তাইওয়ান, এ্যান্ড দ্য রিপাবলিক অব সাউথ আফ্রিকা।

’ পরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তাইওয়ানের নামটি ওই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ গেলেও ইসরাইল থেকে যায়। এখন ই-পাসপোর্টে ইসরাইল উঠিয়ে দিয়ে লেখা থাকবে-দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড। তিনি বলেন, আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই পছন্দ করি না। সেটা তো মনে মনেই থাকে। এজন্য কি আমরা অফিসিয়ালি বা কোথাও কি লিখি আমি অমুককে পছন্দ করি না ? বিশ্বের কোন দেশের পাসপোর্টে তো ইসরাইলকে নিয়ে এমন লেখা নেই।

 

এক প্রশ্নের জবাবে ড. একে মোমেন জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে ইসরাইলের সঙ্গে আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক করতে যাচ্ছি- এটা ঠিক নয়। আমরা যখন নতুন পাসপোর্ট করি প্রায় ছয় মাস আগে ওখানে আলাদা একটা সিল লাগানো ছিল ‘ইসরাইল’ ব্যতীত। এ রকম লাগানো দুনিয়ার অন্য কোন পাসপোর্টে নাই। বাংলাদেশের পাসপোর্টটা ইউনিক ছিল, সে কারণে এটা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের নতুন পাসপোর্ট যেগুলো হয়েছে, সেগুলোকে আমরা স্ট্যান্ডার্ডাইজড করার জন্য শুধু সিলটা বাদ দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এবং ইসরাইলের পররাষ্ট্রনীতির কোন পরিবর্তন নাই।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী বলেন, পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে বা বৃদ্ধি করতে যা যা দরকার তা করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোনও পাসপোর্টে বাড়তি কথা লেখা নেই। ই-পাসপোর্ট ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের এক নাগরিকের যেসব তথ্য থাকা দরকার সেগুলো রাখা হয়। সেটা পৃথিবীর সব দেশের ইমিগ্রেশনের জন্য প্রযোজ্য। এর বাইরে কোনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ না। মহাপরিচালক বলেন, আমাদের ই-পাসপোর্ট যেগুলো বিদেশে প্রিন্টের জন্য পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো আসতে শুরু করেছে। সেসব পাসপোর্টে এই লেখাগুলো নেই।

এরমধ্যেই এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপ-মহাপরিচালক গিলাড কোহেন। শনিবার এক টুইট বার্তায় গিলার্ড কোহেন লিখেছেন, ইসরাইলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। এটি একটি স্বাগত পদক্ষেপ।

আমি বাংলাদেশ সরকারকে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আশা করি, এতে আমাদের উভয় দেশের জনগণ উপকৃত ও সমৃদ্ধ হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-বাংলাদেশী পাসপোর্টে আগে লেখা থাকত ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরাইল’। অর্থাৎ এই পাসপোর্ট ইসরাইল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ। তবে সম্প্রতি ইস্যুকৃত ই-পাসপোর্টে দেখা গেছে, সেখানে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ লেখা। অর্থাৎ ‘এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ’।

‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ বা ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শব্দ দুটি অনুপস্থিত। গিলাদ কোহেনের টুইটের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশী ই-পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে ইসরাইলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দেয়া টুইট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। মূলত বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ অংশটুকুর অনুপস্থিতির কারণে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আসলে বাংলাদেশী ই-পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য ওই অংশটুকু তুলে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিতই থাকছে।

Sharing is caring!