প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক নাম নিঝুমদ্বীপ। সৃষ্টিকর্তা যেন এখানে ঢেলে দিয়েছেন সৌন্দর্য। এই নিঝুমদ্বীপের ‘চৌধুরী খাল’ পর্যটকদের আলাদা আকর্ষণ। মায়াবী হরিণ দেখতে পর্যটকরা চৌধুরী খালে আসছেন। এর দুই পাশ দিয়ে বিশাল কেওড়া বাগান যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে। বলা যায় নিঝুমদ্বীপের ‘চৌধুরী খাল’ আকৃষ্ট করে ভ্রমণপ্রেমীদের।

জানা গেছে, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বিখ্যাত পর্যটন এলাকা চৌধুরী খাল। এই খালের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে চাইলে যেতে হবে বিকেলে সন্ধ্যার আগে। চৌধুরীর খাল নেমে ঘণ্টা খানেক হাঁটলেই বনের মধ্যে হরিণের পালের দেখা পেতে পারেন ভ্রমণপ্রেমীরা। তবে হরিণ পাল দেখতে চাইলে হাঁটতে হবে খুব নিঃশব্দে।

যেভাবে যাবেন, চৌধুরী খাল যেতে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের নামার বাজার এলাকা থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় ট্রলার ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতি ট্রলারে ১০ থেকে ১২ জন যেতে পারে। এছাড়া ২০০০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোটে যেতে পারেন চৌধুরী খাল। সেক্ষেত্রে ৫ থেকে সাতজন যেতে পারেন। চৌধুরী খালে নেমে হেঁটে যেতে হবে অরণ্যে। কেওড়া বাগান দিয়ে হাঁটলে দেখা মিলবে হরিণের পাল এবং হরিণের সুপেয় পানির পুকুর।

খালেদ মাহমুদ ফুয়াদ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, নিঝুমদ্বীপে আমি প্রথম এসেছি। বাংলাদেশের এমন কোনো পর্যটন কেন্দ্র নাই যেখানে সমুদ্র, হরিণ ও বন আছে। নিঝুম দ্বীপে সব পাওয়া সম্ভব। এখানে চৌধুরী খাল আছে খুবই সুন্দর। এটা দিয়ে যখন বনে প্রবেশ করলাম তখন অনেক কিছু দেখতে পাইলাম। বৈচিত্র্যপূর্ণ জায়গাটা দেখতে খুবই সুন্দর।

ফেনী থেকে চৌধুরী খালে ঘুরতে আসা আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কোথাও এক সঙ্গে সমুদ্র এবং বন পাইনি। এখানে এসে আমরা এসব পেয়েছি। অনেক ভালো লেগেছে।

ঘুরতে আসা মাসরুর রহমান বলেন, নিঝুমদ্বীপের সৌন্দর্য সুন্দরবনের সৌন্দর্যকেও হার মানাচ্ছে। চারপাশে সমুদ্র সৈকত, ভেতরে অরণ্য ও হরিণের সুপেয় পানির পুকুর। হরিণ দৌড়াদৌড়ি করছে, শিয়াল কাছে। এ এক অন্য রকম স্থান।

বনবিভাগের প্রহরী মো. সোহেল রানা বলেন, নিঝুম দ্বীপে কেওড়া গাছ, গাইন গাছ ও গেওয়া গাছ আছে। কেওড়া গাছ বড় হয়। গেওয়া গাছটা ছোট হয়। পশুপাখির মধ্যে হরিণ, শিয়ালসহ অন্যান্য জীবজন্তু আছে। বানর আছে, বানর কেওড়া পাতা ভেঙে নিচে ফেললে হরিণ সে পাতা খায়। হরিণ দেখার জন্য বিকেলে অথবা রাতে এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকতে হবে। মানুষের একটু শব্দ পেলে এরা দ্রুত অন্য জায়গায় চলে যায়। মানুষ যদি চুপ করে বসে থাকে তাহলে পালে পালে হরিণ বের হয়ে আসে। আবার পানি খাওয়ার জন্য আসে।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দিনাজ উদ্দিন বলেন, নিঝুমদ্বীপ পর্যটন এলাকা। হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসে। আমি বলব নিঝুমদ্বীপে পর্যটকরা অনেক বেশি নিরাপদ। গ্রাম পুলিশ, পুলিশ ও স্থানীয় জনগণ অনেক বেশি হেল্পফুল। এখানে আবাসন ব্যবস্থা ভালো আছে। পর্যটকরা এসে কখনো কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়নি। সহযোগিতার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি। বিশেষ করে আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সব সময় পর্যটকদের পাশে আছেন। আমাদেরকে সর্বদা দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, নিঝুম দ্বীপ কেবল বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। গুগলে গেলে অথবা সোশাল সাইটে গেলে নিঝুম দ্বীপের নানা রকম চিত্র পাবেন। অনেক অনেক আকর্ষণীয় স্থান আপনি দেখতে পাবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নেই। কেননা সেখানে বেড়িবাঁধ নেই। জোয়ার আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চলাচলের পথ নষ্ট হয়। তবে নিঝুমদ্বীপের ব্র্যান্ডিং এর জন্য আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করছি।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, নিঝুম দ্বীপকে ঘিরে আমাদের অনেক উন্নয়ন করার ইচ্ছা আছে। আমরা চেষ্টা করছি পর্যটকরা যেন এখানে এসে নির্বিঘ্নে ঘোরাঘুরি করতে পারে। এখানে অনেকগুলো হোটেল করা দরকার। ছোট ছোট হোটেল বা খাবারের রেস্টুরেন্ট। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। এই জন্য আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

Sharing is caring!