এনকে টিভি প্রতিবেদক, ফেনী:

 

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জিএমহাট উচ্চ বিদ্যায়ের নিদিষ্ট প্রকাশনীর গাইড বই ও সিলেবাস বাধ্যতামূলক করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছে বিদ্যালের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালেয়ে রেজুলেশন করে দিয়েছেন এবং সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বিদ্যালয়ে কোন নোট গাইড বা ভিন্ন প্রকাশনীর সিলেবাস গ্রহনযোন্য নয় এবং বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াতে পারবেনা।

সারাদেশে যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবলমাত্র বোর্ড কর্তৃক মেইন বই (মূল বই) ছাড়া কোন ধরনের গাইড, নোট নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু কে শুনে কার কথা? সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙগুলি দেখিয়ে নিজ ফায়দা লুটতে অবৈধ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে এসব নোট এবং গাইড বই। আর এসব অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে খোদ প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।

জানা যায়, ফুলগাজী উপজেলার জিএমহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান অবৈধভাবে প্রকাশনীর কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে কোমলমনতি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঞ্জেরী প্রকাশনীর গাইড, নোট, সিলেবাস বাধ্যতামূলক করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য জানান, শিক্ষক মিজানুর রহমান ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের জন্য পাঞ্জেরী প্রকাশনীর গাইড, নোট, সিলেবাস বাধ্যতামূলক করে দিতে প্রকাশনীর জলিল নামের এক ব্যক্তি থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা গ্রহন করেছেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সিলেবাস প্রণয়ন নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বস্ব শ্রেনী শিক্ষক কর্তৃক তৈরী করে দেয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালের সকল শ্রেনীর সিলেবাস পাঞ্জেরী প্রকাশীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সরকারীভাবে শিক্ষকদের প্রাইভেট বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছে বিদ্যালয়ের গনিত বিষয়ের শিক্ষিক মোঃ মাহবুব এবং ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক শুভাষ চন্দ্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের কক্ষে তার সামনে থাকা টেবিলেই পাঞ্জেরী প্রকাশনীর গাইড পাওয়া গেছে এবং তিনি সেটি লুকানোর চেষ্টা করেন। একালাবাসিরা জানান, বিদ্যালয়টি বহু পুরনো এবং বিগত বছর থেকে সুনামের সাথে ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান শিক্ষকসহ আরো কিছু অসাধু শিক্ষকের অন্যায় অনিয়মের কারনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ধ্বংস হতে চলেছে। একালাবাসি এসব অসাধু শিক্ষকদের অপসারন দাবি করেন।

এব্যাপারে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের কাছে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গাইড নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যেদিন প্রকাশনীর লোক এসেছে সেদিন আমি বিদ্যালয়ে ছিলামনা উপজেলায় ছিলাম। আমাদের কাছে অনেক প্রকাশনীর লোকজন আসে গাইড দিয়ে যায় এসব গাইড আমরা গরীবদের মাঝে দিয়ে দিই। প্রকাশনীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলামকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাইড, নোট ও সিলেবাস কতটুকু বৈধ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাক্ষিত এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যাবেনা। আমি (ইউএনও) বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্তির পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছি তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিদ্যালয়ে গিয়ে একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজুলেশন করে দিয়েছি সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বিদ্যালয়ে কোন নোট গাইড বা ভিন্ন প্রকাশনীর সিলেবাস গ্রহনযোন্য নয় এবং বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াতে পারবেনা। আমি বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখব এবং তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব। এবিষয়ে কোন ছাড় নেই।

 

  • এনকে টিভি/বি/এস/এম/এস

Sharing is caring!