বর্তমানে বাংলাদেশে জীবননাশী বিষ ফরমালিন ছাড়া ফল, সবজী, মাছ, মাংস বা খাবার পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর তাই জীবন সুরক্ষায় পরিবর্তে মাছ, ফল ও সবজি খেয়ে উল্টো আমাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, জীবন চলে যাচ্ছে হুমকির মুখে। কারণ ফরমালিনযুক্ত খাবার বাজারে সয়লাব। আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রতিদিন বিষ খেয়ে চলেছি।

আজ আমরা জেনে নেবো কীভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফরমালিন দূর করা যায়:

মাছ-মাংস:

পদ্ধতি ১: ১ ঘণ্টা মাছ-মাংস পানিতে ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ৬০ ভাগ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ১৫ মিনিট মাছ ডুবিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়।

পদ্ধতি ২: একটি কার্যকর উপায় হল, মাছটি রান্না করার আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা। এতে করে মাছের ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে।

পদ্ধতি ৩: আপনি যখন চাল ধোবেন এবং প্রথমবার চাল ধোয়ার সময় যে পানি বের হবে সেটি দিয়ে প্রথমে মাছটি ধুয়ে নিন। এরপর আবার সাধারণ পানি দিয়ে ধোবেন। দেখবেন এতে করে প্রায় ৭০ শতাংশ ফরমালিন দূর হয়ে যাবে।

পদ্ধতি ৪: আমাদের দেশে এখন শুঁটকি মাছেও প্রচুর পরিমাণে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। শুঁটকি মাছ থেকে ফরমালিন দূর করতে ঠিক একই রকম পন্থা অবলম্বন করবেন। প্রথমে ১ ঘণ্টা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে পরে ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ফরমালিন তো দূর হবেই পাশাপাশি মাছের স্বাদও বাড়বে।

শাক-সবজি:

পদ্ধতি ১: সবজি রান্না করার আগে ১০ মিনিট লবণ গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন।

পদ্ধতি ২: সবজিকে ফরমালিনমুক্ত করার সব চাইতে ভালো পদ্ধতি হল- ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে (পানিতে ১০% আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখা। এতে প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।

পদ্ধতি ৩: কোন ফলমূল খাবার আগে সেটি হালকা গরম এবং লবণ মিশ্রিত পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯৮ শতাংশ দূর হবে।

পদ্ধতি ৪: অনেক সময় ফলমূলে বিশেষ করে আম, লিচুতে স্প্রে করার মাধ্যমে ফরমালিন দেয়া হয়। সেজন্য গাড় বা উজ্জ্বল রঙের ফল কেনা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া কিছু কিছু কাজ করে নিতে পারেন খাবারের ফরমালিন দূর করার জন্য।

ফল-মুল:

গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন: বাজার থেকে যেকোনো ধরনের ফল ও সবজি কেনার পর তা খাওয়ার আগে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। বেশি গরম বা ঠাণ্ডা পানি সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক দূর করে না। তাই হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। ফল ও সবজির ওপরে থাকা মোম, আঠা ও অন্যান্য রাসায়নিক ধুয়ে দূর করে দিতে পারে উষ্ণ গরম পানি।

লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন: একটি বড় পাত্রের মধ্যে পানি নিয়ে তাতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে ফল ও সবজি ধুয়ে নিন। লবণ-পানি দিয়ে ধোয়ার পর আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন: রাসায়নিক দূর করার সেরা সমাধান হচ্ছে- ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ফল ও সবজি ডুবিয়ে রাখা। বড় একটি পাত্রে পানি নিয়ে ১ চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর কলের পানি দিয়ে আবার ধুয়ে নিন।

খোসা ফেলে দিন: যেসব ফল ও সবজির খোসা ফেলে দেওয়া যায়, সেগুলোর খোসা ফেলে দিন। যেমন: পেঁয়াজ, আলু, অ্যাভাকাডো, আপেল, আদা, আম, গাজর, মূলা ইত্যাদি। প্রথমত এসব ফল ও সবজি ধুয়ে নিন, তারপর খোসা ফেলে দিন। খোসা ছাড়ানোর পর আবারো ধুয়ে নিন।

নিজস্ব ক্লিনার তৈরি করুন:

এক টেবিল-চামচ লেবুর রসে ২ টেবিল-চামচ বেকিং সোডা যোগ করে ভালোভাবে মেশান। এবার এতে ১ কাপ পানি যোগ করুন। এই মিশ্রণটি ফল ও সবজিতে স্প্রে করুন। পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করুন।

Sharing is caring!