সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে, কোনোভাবেই যেন বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করতে না করতেই চাল সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চালের বাজারে নতুন সঙ্কট হচ্ছে গরিব মানুষের মোটা চালের সরবরাহ কম। ফলে চাপ পড়েছে সব ধরনের চিকন চালের ওপর। ব্যবসায়ীদের দাবি, মোটা চালের সরবহরাহ কম হওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারভেদে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। ৫৪ টাকা কেজি দরের মাঝারি মানের মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। আর ৫৬ টাকা কেজি দরের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা করে।

সিন্ডিকেট করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে হুমকি দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের বাজার অস্থিতিশীল হবার কোনো কারণ নেই। যদি কেউ অপচেষ্টার মাধ্যমে চালের মূল্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। প্রয়োজনে সরকারিভাবে চাল আমদানি করা হবে।

রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট চালের দাম বাড়লে তা সব ধরনের চালের দামের ওপরে প্রভাব ফেলে। কারও কারও অভিযোগ মিনিকেট চালের দাম বাড়ানোর পেছনে এই চালের উদ্ভাবক কুষ্টিয়ার কিছু ব্যবসায়ী দায়ী। হঠাৎ করে মিনিকেট চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করায় বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাবে, গত এক বছরে গরিব মানুষের মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চিকন চালের দামও বেড়েছে ১৪ শতাংশ। মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা। আর প্রতিকেজি চিকন মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে বাজারভেদে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন মাঝারি মানের চালের দাম ৯ শতাংশ ও সরু চালের দাম ১৫ শতাংশ বেশি।

টিসিবির তথ্যমতে, শুধু চালই নয়, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব ধরনের পণ্যের দাম এখন বেশি। সরকারি এই সংস্থা জানায়, গড়ে ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৭টি পণ্যের দামই বেশি ও বাড়তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তে চিকন চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, আগে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

এদিকে আইসিডিডিআরবি এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট-অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় বছরজুড়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশ লকডাউনে থাকার কারণে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় আয় কমেছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চের শেষের দিকে সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কারণে দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫১ শতাংশের কোনও আয় নেই এবং কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ নিম্নআয়ের মানুষ। এছাড়া, ২৮ শতাংশ মানুষ মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর বলেন, করোনার কারণে মানুষ নানা ধরনের সঙ্কটে রয়েছেন। মানুষের হাতে জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। এ সময় অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। এমন অবস্থায় কোনও মহলের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা দুঃখজনক। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করি।

Sharing is caring!