শাকিল আহমেদঃঃ

আজ ১৭ ই অক্টোবর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার,বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর গর্বের প্রতীক আবদুল মালেক উকিলের ৩৫তম মৃত্যু বার্ষিকী।

.
তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

.
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও মরহুম আবদুল মালেক উকিলের ভাতুস্পুত্র এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ অক্টোবর সোমবার নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত উত্তোলন, সকাল ৯টায় জেলা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের করব জিয়ারত, দোয়া ও পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাধেরহাট আবদুল মালেক উকিল ডিগ্রি কলেজ, আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, মাইজদী গালর্স একাডেমি হাই স্কুল এবং মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা রয়েছে।

.
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক নেতা আবদুল মালেক উকিল ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীনতার আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
.

আবদুল মালেক উকিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে তাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাকেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ এবং ১৯৫৪ সালের জুন মাসে ইস্ট বেঙ্গল পাবলিক সেফটি অধ্যাদেশ অধীনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোস্তাক গংরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর সেনাবাহিনী তাঁকে আবারও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।কিন্তু তারপরও অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি মরহুম আবদুল মালেক উকিল।

.
আবদুল মালেক উকিল ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬২-৬৪ সময়কালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ছিলেন। আবদুল মালেক উকিল ১৯৫৬, ১৯৬২ এবং ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

.
১৯৬৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা এবং সংযুক্ত প্রাদেশিক পরিষদ ও বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলন সময় মালেক উকিলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির নয়টি সদস্যদের একজন হিসাবে নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে লাহোরে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরে তারা একসাথে করাচীতে ভ্রমণে যান। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নোয়াখালী থেকে সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন।
.

১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৎকালীন নোয়াখালী-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং নতুন মন্ত্রিসভায় তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দলের দুঃসময়ে ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আবদুল মালেক উকিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
.
আব্দুল মালেক উকিল ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার সুধারামের রাজাপুর গ্রামে জনগ্রহণ করেন। রাজাপুর থেকে রাজপথের এই জাতীয় নেতা ১৯৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

Sharing is caring!