এনকে টিভি ডেস্ক রিপোর্ট:

মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের’ আতঙ্কিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। দু’র্নীতিবাজদের তালিকায় নিজেদের নাম রয়েছে কি না সেটি জানতে দলটির এমপিরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থও হচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় নেতারাও তালিকায় কাদের নাম রয়েছে বলতে পারছেন না। ফলে মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বলেখ্যাত নেতারা কেউই এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।

আওয়ামী লীগের দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সবার এক প্রশ্ন তালিকায় সিটিং এমপিদের মধ্যে কারা রয়েছেন। এছাড়া সাবেক এমপি, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিষয়েও জানতে চান সবাই।

দলের গুটিকয় শীর্ষ নেতা ছাড়া কেউ জানে না, তালিকায় কার নাম আছে। দলের একাধিক নেতা এই শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের কাউন্সিলের ছয় মাস আগে থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন।

সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্ধারণ করতেই এটি করা হয়। এবারও সম্মেলনের আগে সব পর্যায়ের নেতার সম্পর্কে জরিপের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি গত কয়েক মাসে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় তিনি এমপিদের সম্পর্কেও সব খবর নিতে বলেন।

এসব নেতা মনে করেন, এবার সম্মেলনের আগে এই শুদ্ধি অভিযান করা হয়েছে। যাতে কোনো বিতর্কিত এবং দু’র্নীতিবাজ দলে ভিড়তে না পারেন।

আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার বলেন, ২৫-৩০ এমপির বিরুদ্ধে তৃণমূল থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ এসেছে শেখ হাসিনার কাছে। রোজার ঈদের আগ থেকে এমপিসহ দলের অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিষয়ে খোঁজ নিতে মাঠে নামে বিভিন্ন সংস্থা।

কয়েক দফা মাঠ জরিপ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে শুধু দু’র্নীতিবাজ এমপিদের বিষয়ে নয়, নেতৃস্থানীয়দের অবস্থান কী এবং তারা কে কী করছেন সব তথ্যই সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে কাজটি করা হচ্ছে।

রাজশাহী অঞ্চলের এক নেতা বলেন, এমপিদের অনেকের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করে দলে অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ হরহামেশাই আসছিল।

তাছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রতিদিনই আসত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এরকম অনেকেই এসব চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। তারা সরাসরি নেত্রীকে বলেছেন। এর মধ্যে দলীয়প্রধান কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করেছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন অপরাধ এবং অ’নৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ২৭ এমপিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে সাবেক ১২ এমপি।

সংসদ সদস্য হয়েও এরা স’ন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব টিম দিয়ে এই অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন।

এই ২৭ এমপির মধ্যে ঢাকার তিনজন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর, রাজশাহী-রংপুরসহ অন্তত ১৭টি জেলার ২৭ এমপির বিরুদ্ধে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহীর কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’র্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার রাজনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

ওইদিনই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অপসারণের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এক শীর্ষনেতা বলেছেন, এ বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী

লন্ডন থেকে ফিরলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়। সেই ফাইলে পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতার বিভিন্ন অপকর্মের বিবরণ ছিল।

প্রধানমন্ত্রী ওই রিপোর্ট থেকে তার নিজস্ব টিম দিয়ে এইসব অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। সেখান থেকে তিনি ২০০ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পান। এর আগে এ বছর ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সভায় এ বিষয়ে আলোচনা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।

পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। পরে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই অভিযান শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেঁতুলিয় যেখানে যত দু’র্নীতিবাজ ও মা’দকবাজ আছে, সেখানে অভিযান চলবে। মা’দক, দু’র্নীতি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি যারাই করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে চুনোপুঁটি হোক আর রাঘব বোয়ালই হোক।’

তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দু’র্নীতিবাজদের ধরতে অভিযান চলবে। কোনো দু’র্নীতিবাজ অপরাধীর আওয়ামী লীগে ঠাঁই হবে না। বিএনপির সময়ই এই দু’র্নীতিবাজদের জন্ম। এখনো যারা ধরা পড়ছে অনেকেই বিএনপির রাজনীতি করত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এই অভিযান চলবে। দু’র্নীতিবাজদের আর লুকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটর করছেন। এর আগে তিনি উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা এবং সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন দেখে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য দু’র্নীতিবাজদের তালিকা দুদক, এনবিআরসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠান। সে অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরেও আনা হয়। তথ্যসূত্রঃ দেশ রূপান্তর

Sharing is caring!