আফগানিস্তান এখন তালেবানগোষ্ঠীর দখলে। ২০০১ সালে মার্কিন ও ন্যাটোর সামরিক অভিযানে রাষ্ট্রক্ষমতা হারানো গোষ্ঠী ২০২১ সালে, মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে দেশের ক্ষমতা ‍পুনরায় দখলে সক্ষম হয়েছে।

কট্টরপন্থি এই ইসলামি গোষ্ঠী বরাবরই তাদের শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা একসময়ের শীর্ষ নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন ২০১১ সালে, কিন্তু সেই তথ্য ২০১৩ সাল পর্যন্ত গোপন রেখেছিল তারা।

কিন্তু গোষ্ঠীটির সাম্প্রতিক সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন কারা? ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম এএফপি সম্প্রতি শীর্ষ চার তালেবান নেতার সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রকাশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতা হারানোর ২০ বছর পর তা পুনরায় দখলে সক্ষম হওয়ার ক্ষেত্রে এই চার নেতাই তালেবান বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এরা হলেন-

হেবাতউল্লাহ আখুনজাদা (শীর্ষ নেতা)

Hebayet Ullah

২০১৬ সালে এক ড্রোন হামলায় তৎকালীন তালেবান শীর্ষ নেতা মোল্লা মনসুর আখতার নিহত হওয়ার পর তালেবানগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা হিসেবে অভিষিক্ত হন হেবাতউল্লাহ আখুনজাদা।

শীর্ষ নেতা হওয়ার আগ পর্যন্ত তালেবানগোষ্ঠীর একজন সাধারণ ধর্মীয় নেতা ছিলেন তিনি এবং ওই পদে আরোহনের পর সামরিক শাখাকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবর্তে গোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে ভূমিকা রাখছেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্কের প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি তাকে ‘বিশ্বস্তদের নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

মোল্লা মনসুর আখতারের নিহত হওয়ার পর তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তালেবান সদস্য ও কর্মীদের পুনরায় একত্রিত ও সংগঠিত করা এবং সাম্প্রতিক তালেবান সাফল্য বলছে, তিনি ভালোভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

মোল্লা বারাদার

Baradar

গত শতকের সত্তোরের দশকের শেষ দিকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার মধ্যে দিয়ে ইসলামের কট্টরপন্থায় আগমন ঘটেছিল মোল্লা আবদুল গনি বারাদরের। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে প্রতিষ্ঠিত তালেবানগোষ্ঠীর অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নেতা একসময় এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের প্রধান সহযোগী ছিলেন।

২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর আফগানিস্তানের তৎকালীন অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে গোষ্ঠীর সঙ্গে আপোস এবং সরকারি প্রশাসনে তালেবান সদস্যদের অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব দিয়ে অন্তবর্তী সরকার প্রধান হামিদ কারজাইকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।

২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়ার পর দীর্ঘ আট বছর সে দেশের কারাগারে ছিলেন বারাদার। পরে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে তাকে কারামুক্ত করে পাকিস্তান এবং কাতারে আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ বন্ধ বিষয়ক শান্তি সংলাপে তালেবান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। বর্তমানে তালেবানগোষ্ঠীর রাজনৈতিক শাখার প্রধানের দায়িত্বে আছেন আবদুল গনি বারাদার।

সিরাজউদ্দিন হাক্কানি

Hakkani

তালেবানগোষ্ঠীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও আফগানিস্তানের অন্যতম শক্তিশালী জঙ্গিগোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ দেখভাল করে থাকেন।

তালেবানগোষ্ঠীর অন্যতম সহযোগী হাক্কানি নেটওয়ার্ক মূলত আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। আত্মঘাতী হামলা, আফগান ও বিদেশী নাগরিকদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য এই নেটওয়ার্ক কুখ্যাত।

মোল্লা ইয়াকুব

Yakoob

তালেবানগোষ্ঠীর সাবেক শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব গোষ্ঠীর সামরিক শাখার প্রধান। ২০২০ সালে তিনি এই পদে আসীন হন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, মোল্লা ওমরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থেই তাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : এএফপি

Sharing is caring!