এনকে টিভি ডেস্ক:

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল দেশের জনপ্রতিনিধিরাও শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক! বর্তমানে ইসি অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এনেছে! স্থানীয় নির্বাচনগুলোও দলীয় প্রতীকেই সম্পন্ন করছে ইসি।

দুঃখজনক হলেও সত্য! আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ইসি কর্তৃক অনেক শর্তারোপ থাকলেও প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোন শর্ত আছে কিনা তা এদেশের আপামর জনসাধরনের দৃষ্টিগোচর হয়নি!

একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করার জন্য, দেশকে উন্নত থেকে উন্নততর করার জন্য প্রার্থীদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া অতীব প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয়তাকে অনুভব করে ইসির নিকট আমাদের কড়জোড় আবেদন থাকবে- কমিশনার ও ইউপি সদস্য পদে প্রার্থীদের নূন্যতম এসএসসি, ইউপি চেয়ারম্যান এইচএসসি, মেয়র স্নাতক, উপজেলা চেয়ারম্যান স্নাতক, সংসদ সদস্য অনার্স/মাস্টার্স! শিক্ষাগত যোগ্যতা আবশ্যক করে দেওয়া প্রয়োজন।

শিক্ষাগত যোগ্যতার সঠিক একটি নীতি না থাকার কারণে দস্তখত পর্যন্ত জানে না এমন লোকেরাও প্রার্থী হওয়ার নজির রয়েছে হাজার হাজার। স¤প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে পঞ্চম শ্রেণী, অষ্টম শ্রেণী পাস, মেয়র পদে এসএসসি পাস প্রার্থী হয়েছেন।

একজন কাউন্সিলর যদি পঞ্চম শ্রেণী পাস হন এবং একজন মেয়র যদি হন এসএসসি পাস তাহলে তারা কীভাবে পরিচালনা করবেন একটি পৌরসভা। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শত শত মেম্বার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, অথচ তাদের অনেকেই অশিক্ষিত। আবার এদের মধ্যে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত যাননি, শুধু দস্তখত শিখেছেন। বরাদ্দকৃত কাগজপত্র তারা পড়তে পারেন না। ভোট প্রতিটি নাগরিকের নাগরিক অধিকার। প্রতিটি ভোটার-নাগরিকের অধিকারও রয়েছে মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থী হওয়ার। এটা সবার নাগরিক অধিকার।

জানা মতে, ইটভাটার শ্রমিক-মাঝি, সুপারি বিক্রেতা, মাটি কাটার সরর্দার, মাছ বিক্রেতা, রিকশাচালক ও চুপি চুপি বলি (…………) মানুষও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পাঠক হয়তো মনে করবেন এরা কি মানুষ নয় অথবা এদের কি অধিকার নেই প্রার্থী হওয়ার? নিশ্চয়ই আছে, তা তাদের নাগরিক অধিকার। তারপরও বলতে হয়, একজন মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থী ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি মাপকাঠি থাকা দরকার।

কারণ একজন জনপ্রতিনিধি শিক্ষিত না হলে তার দ্বারা ওই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে সে যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না, তেমনি কী প্রকল্প তৈরি করতে হবে, কোন প্রকল্পে কত বরাদ্দ আনতে হবে তা কিছুই জানেন না। বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, একজন ডিগ্রী পাস ব্যক্তি নাগরিক সনদ অথবা চাকুরির সুপারিশের জন্য একজন ৮ম শ্রেণী পাস জনপ্রতিনিধির ধারস্থ হতে হয়।

এজন্য উচিত স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের একটি শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করা এবং এ ব্যাপারে একটি আইন পাস করা প্রয়োজন যে, মেম্বার প্রার্থীর এই শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে, চেয়ারম্যানকে এই যোগ্যতা, কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীকে যোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে প্রার্থীর সংখ্যাও কমে আসবে, জনগণও পাবে শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি। যার দ্বারা উন্নয়ন ঘটবে এলাকার। অনেক সময় দেখা যায়, অশিক্ষিত লোক প্রার্থী হওয়ার কারণে কোনো শিক্ষিত লোক প্রতিদ্বদ্বিতা করতে চান না। তাদের বক্তব্য, একজন অশিক্ষিত লোকের সঙ্গে প্রতিদ্বদ্বিতা করার চেয়ে প্রার্থী না হওয়াই ভালো।

ইসি দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে আইন প্রণয়ন করেছেন, এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে করে প্রকৃত রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে তারাই শুধু প্রার্থী হতে পারবে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারবে। এর সঙ্গে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি যদি নির্ধারণ করা হয় তাহলে দেশের মানুষ যেমন শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, তেমনি এলাকার উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।

যদি শিক্ষিত জাতির কথা বলি তাহলে জনপ্রতিনিধিদেরও শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। ইসি শিক্ষাগত যোগ্যতাকে আবশ্যক করলে দেশের জনগণ সুদ, ঘুষ, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, নৈরাজ্যতা, রাহাজানি থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে বলে মনে করি। কেননা একটি শিক্ষিত জাতি ও আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য, সুন্দর সোনালী সমাজ বিনির্মাণের জন্য শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি হওয়াই বাঞ্ছনীয়! শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া আদর্শ সমাজ গঠন সম্ভব নয়।

আশা করি সরকার ও ইসি বিষয়টি সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে এবং গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক-
মোহাম্মদ সোহেল
নোয়াখালী প্রতিনিধি- দৈনিক ভোরের কাগজ
বার্তা সম্পাদক- দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী
সাধারণ সম্পাদক- বাংলাদেশ রিপোর্টাস ক্লাব,
নোয়াখালী জেলা শাখা।

Sharing is caring!