রাজনীতি, সারা বাংলা | তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০১৯
সংবাদদাতা:
গত ১৫ই নভেম্বর অনেকটা গোপনেই প্রকাশিত হলো যুক্তরাজ্য বিএনপির পূর্ণাজ্ঞ কমিটি। ২০১৮ সালের ১৫ই জুন এম এ মালেক এবং কয়সর এম আহমেদকে যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত করে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান।
সেই সময় কেন্দ্র থেকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য ৩ মাস সময় সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে গত দেড় বছরেও এই কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। আর এই দেড় বছর চলছিল পদ নিয়ে এই দুই চক্রের বাণিজ্য।
অবশেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের চাপে অত্যন্ত গোপনে মালেক-কয়সর পদ ভাগাভাগি করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাজ্ঞ কমিটি ঘোষণা করে। আর এই কমিটি দেখ ক্ষুব্ধ হয়ে পরে যুক্তরাজ্যের বিএনপির নেতা কর্মীরা।
ইতিমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সম্মানের কথা চিন্তা করে চুপচাপ আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের এক সাবেক ছাত্রনেতা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই কমিটি আসলে সততার হার এবং প্রতারকদের বিজয় হিসাবে দেখছেন।
সভাপতি মালেকের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ নেই, যা বলা যাবে না। নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে, অর্থ আত্মসাৎ, পদ বাণিজ্য এমনকি সমকামিতার অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। ঠিক একি ভাবে কয়সরের বিরুদ্ধেও রয়েছে পদ বাণিজ্য, আর্থিক খাতে প্রতারণা সহ নানা অভিযোগ।
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কয়সর তার ভাইয়ের রেস্টুরেন্টের একজন ওয়ার্কিং পার্টনার ( নাম মাত্র) থেকে বর্তমানে বিশাল ব্যবসা ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পূর্ব লন্ডনের হোয়াট চ্যাপেল এলাকায় প্রায় দেড় মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে “রানী” নাম একটি গ্রোসারী শপ দিয়ে তিনি মিলিনিয়ারের খাতায় নাম লেখান।
সবচেয়ে বেশি সমালোচিত নামটি হচ্ছে পারভেজ মল্লিক। তারেক রহমানের ঘনিষ্টতার পরিচয়ে পূর্ব লন্ডনে গড়ে তোলেছে এক ভয়াবহ প্রতারক চক্র। চক্রটির এই নেতা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, ইউরোপে আদম পাচার, পদ বাণিজ্য এবং তদবির বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যবসার নাম করে এবং জিয়া পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ করে দেবার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ পাউন্ড। তার এই জালে ধরা পরে এমনি একনজন সুইডেন প্রবাসী ড: রুবেল। তার কাছ থেকে ঐ একই প্রক্রিয়ায় ৭০ হাজার পাউন্ড নিয়ে এখন আর তা ফেরত দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী।
তার স্ত্রীও কম যান না। অতীতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভানেত্রী এবং শেখ হাসিনার প্রিয় হয়েও হটাৎ করে জিয়া পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে তার রাজনৈতিক গুরু এনামুল হক শামীমের ছোট ভাই, লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডিফেন্স অ্যাটাচ হিসাবে কর্মরত ব্রিগেডিয়ার এনামের সাথে তার সখ্যতার কথা লন্ডন থেকে অনেকেই স্বীকার করেছেন।
লন্ডনে সবচেয়ে বিতর্কিত নারী এবং কল গার্ল হিসাবে পরিচিত ডালিয়া লাকুরিয়াকে নিয়ে বাঙালি কমিউনিটিতে সব সময়ই মুখরোচক আলোচনা হয়। এই রকম একজনকে সম্পাদক পদে দেখে অনেকেই শুধু অবাক নয়, ঘৃনায় কমিটিতে না থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
পুরো কমিটিটি ঠিক এভাবেই প্রতারক চক্রের হাতে চলে যাওয়ায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ফলে যুক্তরাজ্য বিএনপিতে ভালো, সৎ এবং যোগ্য নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এই চক্রের কারণে তারা তাদের নেতা তারেক রহমানের কাছে যেতে পারছেনা বলে জানিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, তাদের কথা বলতে পারলে দল লাভবান হতো।
Leave a Reply