আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলমান কাশ্মীর সঙ্কট নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইমরান খানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তিনি দুই নেতার প্রতি আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট হঠাৎ করেই অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত ৩৭০ ধারাটি বাতিল করে মোদি সরকার। এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ এবং সেখানকার বাসিন্দাদের ঘরে আটকে রাখার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ পাকিস্তান এ নিয়ে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তান ও তাদের বন্ধু দেশ চীনের আহ্বানে গত শুক্রবার একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আয়োজন করেছিলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
তবে ভারত শুরু থেকেই কাশ্মীর সঙ্কটকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি অধিকৃত কশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করার পর মোদির কোনো কোনো মন্ত্রী পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর দখলে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন।
উপমহাদেশের এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সোমবার সন্ধ্যায় মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর দাবি, দীর্ঘ আধ ঘণ্টা ধরে দুই নেতা নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। এ সময় মোদি নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও ট্রাম্পের কাছে নালিশ করেছেন বলে জানা যায়। মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাফ বলেছেন, পাকিস্তানের এসব ভারত-বিরোধী কথাবার্তা এবং চড়া সুর দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির পক্ষে সহায়ক নয়।
মোদির ভাষায়, ‘এ অঞ্চলের কিছু নেতা (ইমরান খান) ভারত-বিরোধী হিংসা এবং ঘৃণা প্রচার করছেন, যা অঞ্চলের শান্তির পক্ষে অনুকূল নয়। সন্ত্রাস ও হিংসামুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করা এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।’
এর কিছু সময় পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ফোন করেন ট্রাম্প। এসময় পাক প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানান, আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত বলে স্বীকৃত এই ভূখণ্ড নিয়ে ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্তটি এই অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট করছে।
জবাবে ট্রাম্প উপ মহাদেশের দুই নেতাকে কাশ্মীর নিয়ে চলমান উত্তেজনা কমিয়ে আনার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধানের তাগিদ দেন।
প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দুইবার ইমরান খানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন ট্রাম্প। এর গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর ইস্যুতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হওয়ার আগে দুই টেলিফোনে কথা বলেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে মোদি ও ইমরানের সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে একটি টুইট করেছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও মোদিকে ‘দুই প্রিয় বন্ধু’উল্লেখ করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে বাণিজ্য, কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কাশ্মীর নিয়ে কথা বলেছি। কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ভারত ও পাকিস্তানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
যদিও কোনো কোনো কূটনীতিক মনে করেন, কাশ্মীরের বর্তমান সঙ্কটের সূচনা ট্রাম্পের এক বিবৃতিকে কেন্দ্র করে। গত মাসে ওয়াশিংটন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তখন তার সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছে আছেন।
তিনি তখন দাবি করেন, ‘দু’সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। মোদী আমাকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে বলেন। আমি বলেছি, আপনি রাজি থাকলে আমি তা করতে পারি। কাশ্মীর খুব সুন্দর জায়গা। সেখানে এত দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিরতা চলছে!’
যদিও তার এই বক্তব্যে সরাসরি নাকচ করে দেয় ভরেত পররাষ্ট্র দপ্তর। কিন্তু এর জের ধরে বিতর্কের ঝড় উঠে গোটা ভারত জুড়ে। সে দেশের বিরোধী দলগুলো এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করলেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব থাকেন মোদি। আর দিন কয়েক পরেই তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যসভায় কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয় এবং রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে নিয়ে আসে।
বিশ্লেষকদের অনুমান, ট্রাম্পের এই বিবৃতিতে ভয় পেয়েই তড়িঘড়ি কাশ্মীর নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এছাড়া কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, ক্ষমাতসীন দল বিজেপি গোটা ভারত জুড়ে যে হিন্দুত্ববাদ ছড়েয় দিতে চায় তার প্রাথমিক পদক্ষেপ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল।

Sharing is caring!