মো: ইদ্রিস মিয়া:

নোয়াখালীতে গ্রাম আদালতে সুফল মিলছে। ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ গ্রাম আদালতে নিস্পত্তিতে উচ্চ আদালতে মামলার জট কমছে। এতে মামলার জট নিরসনে বিচারপ্রার্থীদের পথ দেখাতে স্বক্ষম গ্রাম আদালত।

সদর উপজেলা পরিষদ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত পূর্ব মামলার জেরসহ বিচারপ্রার্থীদের ৫ হাজার ৩২৪টি ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে গত ৬ মাসে ৭০১টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত নোয়াখালী ইউনিয়নে ৫৯টি, পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নে ১০৬টি ও ধর্মপুর ইউনিয়নে ২৩টি মামলা গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ, পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা যায় গ্রাম আদালতে উপস্থিত বাদী-বিবাদী উভয়ের মধ্যে বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আপোস করার চেষ্টা করছেন চেয়ারম্যান-সচিব সহ গঠিত আদালতের সদস্যরা। একাধিক মামলায় প্রথমে আপোস না হওয়ায় বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করে তা নিস্পত্তি করা হয়।

গ্রাম আদালতে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী ও নাগরিকরা বলেন এখানকার চেয়ারম্যান এবং সচিবগন আন্তরিক হওয়ায় অভিযোগ মামলা আকারে গ্রহনের আগেই অনেক বিরোধ সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দেন তারা। এতে গ্রাম আদালত ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তাদের আস্থা বাড়ছে।

ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. সহিদুল ইসলাম বলেন ছোট ছোট বিরোধগুলো প্রতি সপ্তাহে গঠিত গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির কারণে বিচারপ্রার্থীরা গ্রাম আদালতের প্রতি আস্থাশীল হচ্ছে। গ্রাম আদালতে দূত মামলা নিস্পত্তি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা সন্তুষ্ট।

পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম বলেন অভিযোগের ১৫দিনের মধ্যে গ্রাম আদালতের সভা ডেকে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের মধ্যে আপসের মাধ্যমে আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে এবং সহজে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ থাকায় দিনে দিনে ভরসা বাড়ছে এ আদালতে।

নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আতাউর রহমান নাছের বলেন ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালত চালু করেছে সরকার। উচ্চ আদালতে মামলার জট নিরসন এবং অল্প সময়ে স্বল্প খরচে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিচার প্রাপ্তিতে সুবিধা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা নিস্পত্তি হয় গ্রাম আদালতে। নিজ নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আবেদনকারী ও প্রতিবাদকারী মনোনীত ২জন করে ৪জন প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় এ আদালত। তিনি বলেন সদর উপজেলায় গ্রাম আদালত নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। গ্রাম আদালতে বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। গ্রাম আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তিতে উচ্চ আদালতে মামলা জট কমছে।

স্থানীয় সরকার নোয়াখালীর উপ-পরিচালক আবদুর রউফ মন্ডল জানান, সরকারি সেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন, গ্রাম আদালত তার একটি। এর মাধ্যমে গ্রামের লোকজন তার এলাকাতেই নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ নিস্পত্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

Sharing is caring!