এনকে টিভি ডেস্কঃ

  মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার পাচঁখোলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল জাফরাবাদ গ্রামে ড. মো. জিয়াউল হকের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন লেখাপড়ায় অত্যন্ত মনোযোগী। তৃতীয় শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত প্রতি শ্রেনীতেই তিনি প্রথম স্হান অর্জন করেন। চার বছর বয়সে মাকে এবং নয় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে তিনি ভীষন মানসিক ও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন। শত প্রতিকুলতার মাঝে ও তিনি দমে যাননি।

 

মাদারীপুর পাবলিক ইন্সটিটিউশন থেকে সাফল্যার সাথে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজের বানিজ্য বিভাগে সেখান থেকে সফলতার সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় আইন,ইংরেজি সাহিত্যসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগে। সেখান থেকে বিবিএ তে ৩.৮৯ পেয়ে মেধাক্রমে ৩য় স্থান অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগ থেকে এমবিএতে ৩.৯৬ পেয়ে মেধাক্রমে ১ম স্থাম অর্জন করে ।

 

উচ্চশিক্ষার্থে তিনি চীন সরকারের বৃত্তি পেয়ে ২০২০ সালের টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‍্যাংকিং এ এশিয়ার প্রথম দিকের বিশ্ববিদ্যালয় চীনের রাজধানী বেইজিং অবস্থিত “ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এ্যান্ড ইকোনমিকস” বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

 

তার গবেষণার শিরোনাম ছিলঃ” আনভেইলিং দ্যা ডিটারমিনেন্টস এ্যান্ড দ্যা ইফেক্ট অফ অনলাইন সোস্যাল নেটওয়ার্ক অন দ্যা ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশনঃ ইনডিভিযুয়্যাল, ইনস্টিটিউশন্যাল ইনভেস্টরস এ্যান্ড ভার্চুয়াল কমিউনিটিস কন্টেক্টস”

 

চীনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এ্যান্ড ইকোনমিকস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্তদের মধ্যে অসাধারণ ফলাফল করে “মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং এওয়ার্ড” পেয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেন মাদারীপুরের কৃতী সন্তান ড. মো. জিয়াউল হক।

 

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তার সহধর্মিণী সুরাইয়া আক্তার লাকী বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাব জামালপুরে কর্মরত।

 

ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি জানান যে, ‘‘আনন্দ ও দুঃখ দুই রকম অনুভূতিই আছে। আনন্দ হলো, অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এ ডিগ্রি লাভ। আর দুঃখ হলো উচ্চশিক্ষার অর্জন বিদেশে মূল্যায়ন করা হলেও আমাদের দেশে যথাযথ মুল্যায়ন এর অভাব রয়েছে।অন্যদিকে আমার দেশের বিশেষ করে আমার গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ এখনো মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে”।

 

তাঁর গবেষণা থেকে ১৯টি আর্টিেকল বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে জার্নাল অব ইনফরমেশন এন্ড নলেজ ম্যানেজমেন্ট,ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিজনেস ইনফরমেশন সিস্টেমস, জার্নাল অব ইনটারপ্রেনিয়রশীপ ইন ইমার্জিং কান্ট্রিজ অন্যতম। এছাড়া তাঁর গবেষণা কর্ম ২টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং কনফারেন্স প্রসিডিংস হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে।

 

ড. মো. জিয়াউল হক বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) কর্মরত আছেন।

 

ইতিপূর্বে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।

 

তিনি জানান যে ‘‘ পিএইচডি করা মানে শুধু একটি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করাই নয়, পিএইচডি গবেষণার শুরুমাত্র। পিএইচডি আসলে শেখায় কীভাবে গবেষণা করতে হয়, গবেষণার প্রকার, প্রতিটি ধাপ, প্রটোকল, পদ্ধতি নখর্দপনে আসে এবং এ জ্ঞান বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতে সহায়ক হয়।‘‘

 

তিনি বলেন যে, ‘‘পিএইচডি থেকে নেওয়া শিক্ষা দেশের উন্নয়নে, ও নাগরিকদের সেবায় কাজে লাগাতে চাই। যেখানেই কাজ করিনা কেন অর্জিত জ্ঞানের প্রতিফলন রাখার চেষ্টা করবো। সবার আগে মানুষ তথা সৃষ্টির কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিব।‘‘

 

Sharing is caring!