এনকে টিভি প্রতিবেদক:

সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের ছয়ভাইদের বাড়িতে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত জামাল উদ্দিন (৫৫) হত্যার বিচার চায় তার স্বজনরা। পরিবার সূত্রে জানাগেছে, মাত্র একশতক জায়গা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ৩১ জুলাই রাত ২টার দিকে প্রতিপক্ষ শাহ আলমের ছেলে রিয়াদ, হৃদয়, আলাউদ্দিন ও স্থানীয় সন্ত্রাসী জাহিদ, দাউদুলইসলাম ও জামসেদ আলম সহ ১৫-২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘরে ঢুকে জামালকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে।

চোখেমুখে চেতনানাশক স্প্রে করায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় আলমিরা ভেঙে ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করা হয়। সকালে জামালকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ফেনী আধুনিক সদর হাসাপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় জামাল উদ্দিনের দুইু প্রতিবন্ধি ছেলেসহ আরও তিনজন আহত হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত জামালের পুত্রবধূ জাকিয়া আক্তার বাদী হয়ে মো. রিয়াদ (৩৫), তাঁর ভাই, মো. হৃদয় (৩৩), আলা উদ্দিন (৪০), মো. জাহিদ (২৬),মাতা আজিমা আক্তার (৫০), বোন আমেনা খাতুন (৩০), তাঁর স্বামী দাউদুল ইসলাম (৩০), জামশেদ আলমসহ (৫৫) অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে ২ আগস্ট শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে শাহ আলমের স্ত্রী আজিমা আক্তার (৪৫), মেয়ে লাইলী আক্তারকে (২৫) গ্রেপ্তার করেন।

বর্তমানে, মামলার আসামি হৃদয়, দাউদ, আজিমা ও জামশেদ জামিনে রয়েছেন। এবং অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। প্রসঙ্গত, উপজেলার ভাদাদিয়া এলাকার ছয়ভাইদের বাড়ীর জামাল উদ্দিনের সঙ্গে একশতক জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাশ্ববর্তী বাড়ির শাহ আলমের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে।

বিরোধ পূর্ণ জায়গা নিয়ে উভয় পরিবারের একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি উক্ত জায়গার মামলায় জামাল উদ্দিনের পক্ষে আদালত রায় দেয়। আদালতের রায় পেয়ে জামাল গত ২৪ জুলাই ওই জায়গাতে একটি ছোট ঘর নির্মাণের জন্য শ্রমিক ভাড়া করেন। এসময় শাহ আলমের লোকজন হামলা চালিয়ে জামাল উদ্দিনসহ পরিবারের লোকজনকে আহত করে।

এঘটনায় জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে শাহ আলম, তাঁর চার ছেলেসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। এরপর অন্যান্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পন করে কারাবাস শেষে জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে জামাল উদ্দিনসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে হুমকি দেয়।

জামাল উদ্দিন মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় বুধবার দিবাগত রাতে শাহ আলমের নির্দেশে তাঁর চার ছেলের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী জামাল উদ্দিনের ঘরে হামলা চালিয়ে দরজা ভেঙ্গে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘরে ঢুকে জামালকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। চোখেমুখে চেতনানাশক স্প্রে করায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এসময় পুত্র বধূ জাকিয়া আক্তার চিৎকার করলে সন্ত্রাসীরা তাঁকেসহ জামাল উদ্দিনের প্রতিবন্ধী দুই ছেলে মাঈন উদ্দিন ও নাছির উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করে।

পরে সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা-জানালাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আলমিরার তালা ভেঙ্গে সাড়ে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদে দুই লক্ষ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আহতদের চিৎকারের আশ-পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন আহতদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।

কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের মধ্যে জামাল উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ফেনী সদর হাসপালে প্রেরন করেন। সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। পহেলা আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

 

  • এনকে টিভি/বি/এস/এম/এস

Sharing is caring!