একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পারে শিক্ষিত এবং মেধাবী প্রজন্ম সৃষ্টি করতে। কারণ গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু সনদ অর্জন করা যায়; কিন্তু প্রকৃত মেধা আর জ্ঞানের বিকাশ সাধিত হয় না। দেশের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে না; বরং মৌলিক শিক্ষা অর্জনে হোচট খায়। সেদিক দিয়ে নোয়াখালী পুলিশ কেজি স্কুল প্রশংসার দাবিদার। কারণ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিদ্যালয়টি স্বকীয়তা ও নিজস্বতার বলয়ে রেখেছে সফলতার স্বাক্ষর। শিক্ষাক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কে জানে হয়তো একদিন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে বের হয়ে বড় বড় ডিগ্রি লাভ করে দেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় ক্ষেত্রে রাখবে অনবদ্য ভূমিকা। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়; যেদিন এমন প্রত্যাশা সফলতার দরজায় কড়া নাড়বে। আমরা সাপ্তাহিক আজকালপত্র পত্রিকার পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছিলাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ ফ ম রহমত উল্যাহর সাথে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন : এমরান উদ্দিন আহমেদ শাকিল ও আল জিহাদ
আজকালপত্র : আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আজকালপত্র : বিদ্যালয়টি কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : ১৯৯৩ সালে। তবে উদ্বোধন হয়েছে ১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন পুলিশের আইজিপি এএসএম শাহজাহান।
আজকালপত্র : ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কত?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : ১১৯৬ জন।
আজকালপত্র : কোন শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ আছে?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত।
আজকালপত্র : বিদ্যালয়টি কি আবাসিক, না অনাবাসিক?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : অনাবাসিক।
আজকালপত্র : পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে বলুন।
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : পাঠদানে আমাদের শিক্ষকরা অত্যন্ত আন্তরিক এবং পারিবারিক পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকেন। এছাড়া আমরা পাঠদানের ক্ষেত্রে যুগপোযোগী এবং আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে বিশ্বাসী।
আজকালপত্র : লেখাপড়ার মান কেমন?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : অত্যন্ত ভালো। শিক্ষার্থীদের যাতে বাইরে কোথাও প্রাইভেট এবং কোচিং করতে না হয় আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে তাদের পাঠদানে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।
আজকালপত্র : এখানে লেখাপড়ার সুযোগটা নাকি ব্যয়বহুল?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : মোটেই না। বলতে পারেন সহনশীল পর্যায়ে। মাসিক বেতন ৭০০ টাকা। আর আমরা প্রতিটি ক্লাসে সেশন ফি এককালীন ৬-৭ হাজার টাকা নিয়ে থাকি এবং অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো বই-পুস্তক সরকারিভাবে দেয়া হয়।
আজকালপত্র : বিদ্যালয়ে কি শুধু প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পায়, নাকি সবার জন্য উন্মুক্ত?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : আপনি খোঁজ নিলে জানতে পারবেন দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই হচ্ছে সাধারণ অভিভাবকদের সন্তান। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের সন্তানদের জন্য মাত্র তিন শতাংশ কোটা নির্ধারিত আছে। তবে তাও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই এখানে পড়ালেখার সুযোগ পাবে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পুলিশ কেজি স্কুলে লেখাপড়া করার অধিকার রাখে।
আজকালপত্র : মেধাবীদের জন্য কি বিশেষ কোনো সুবিধা আছে?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : হ্যাঁ আছে। প্রত্যেক ক্লাসে ১৮০ জন করে শিক্ষার্থী আছে। তাদের মধ্যে যে প্রথম স্থান অধিকার করে ওই শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। এছাড়া ক্লাসে যারা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে তাদের আমরা বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করি। যাতে অন্য শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহিত হয়।
আজকালপত্র : পিএসসিতে আপনার বিদ্যালয়ের ফলাফল কি?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : শতভাগ পাস।
আজকালপত্র : সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা হয় কি?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : হ্যাঁ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের লক্ষে আমরা বিদ্যালয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ রেখেছি। যাতে করে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননশীলতার উন্মেষ ঘটে। এছাড়া আমাদের বিদ্যালয়ে একজন সংস্কৃতি শিক্ষক আছেন।
আজকালপত্র : ক্রীড়াঙ্গনে আপনাদের অর্জন কি?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : বিদ্যালয়ে প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে ক্রীড়া সংক্রান্ত কোনো প্রতিযোগিতা থাকলে আমরা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করি।
আজকালপত্র : শিক্ষক সংখ্যা কতজন?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : বর্তমানে আমাদের বিদ্যালয়ে ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন।
আজকালপত্র : পরিচালনা পর্ষদ আছে কি? সদস্য সংখ্যা কত?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : জ্বি আছে। বিদ্যালয়ে ১৩ জনের পরিচালনা পর্ষদ আছে।
আজকালপত্র : পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কে? উনার সহযোগিতা কেমন পান।
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : পুলিশ সুপার মহোদয়। তিনি সবসময় বিদ্যালয়ের খোঁজখবর রাখেন।
আজকালপত্র : সরকারি কোনো সহযোগিতা পান কি-না? পেলে সেটা কেমন?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : আর্থিক কোনো সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন হয় না। তবে সরকার থেকে আমরা প্রতি বছর নতুন বই পেয়ে থাকি এবং সরকারি কর্তাব্যক্তিরা আমাদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন।
আজকালপত্র : বিদ্যালয়টি কি এমপিওভুক্ত হয়েছে?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : জ্বি না।
আজকালপত্র : নিয়মিত অভিভাবক সভা হয় কি?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : দেখুন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১১৯৬ জন। তাই সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে একই সময় সভা করা খুবই দুরূহ। স্থান সংকুলানের ব্যাপার তো আছে-ই, অন্যান্য সমস্যাও আছে। তাই আমরা শ্রেণীভিত্তিক আলাদা আলাদাভাবে অভিভাবক সভা করে থাকি।
আজকালপত্র : আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে বহুতল ভবন, অর্থাৎ পাঁচ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করবো এবং এসএসসি পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে নিরিখে আমরা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছি।
আজকালপত্র : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আ ফ ম রহমত উল্যাহ : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

Sharing is caring!