মো. সেলিম:

নোয়াখালী সুবর্ণচরে বিবি আমেনা ওরফে পূর্নিমা আক্তার (১৪) নামের এক স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে পেলে পালিয়ে গিয়ে ৪ মাস পর এলাকায় এসে জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন ৩ সস্তানের জনক এক মসজিদের ঈমাম। গণধোলাই খেয়ে বাড়ীতে ফিরে স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করে ওই ঈমাম।

ঘটনাটি ঘটে ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সুবর্ণচর উপজেলার ৪ নং চর ওয়াপদা ইউনিয়নের পূর্ব চরজব্বর গ্রামের দক্ষিন ওয়াপদা বাজারে। গণ-ধোলাইয়ের শিকার নুর আলম(৩৮), নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডার চর ইউনিয়নের জাকির মিকারের বাড়ীর জয়নাল আবেদীনের ছেলে এবং সুবর্ণচর উপজেলার ৪ নং চরওয়াপদা ইউনিয়নের পূর্ব চরজব্বর গ্রামের হাজী দুদা মিয়া মসজিদের ঈমাম এবং আল আমিন বাজার মাদ্রাসার শিক্ষক।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, একই গ্রামের পূর্নিমা আক্তার (১৪) নামের এক স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে পেলে পালিয়ে যান ৩ সন্তাানদের জনক মসজিদের ঈমাম নুরু আলম। দির্ঘ ৩ মাস চট্রগ্রামের লুকিয়ে থেকে গত পহেলা আগষ্ট সুবর্ণচরে আসেন নুরু আলম। পূর্বেই স্ত্রীর করা অভিযোগে শালিস বসে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বারগন, তারা সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে সুবর্নচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চরজব্বার থানার পুলিশ নিয়ে ৪ নং চর ওয়াপদা ইউনিয়ন পরিষদে যান এবং ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে নুরুল আলমকে ১ মাসের জেল এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। গত বৃহস্পতিবার তার সাজার ১ মাস ফেরিয়ে গেলে জেল থেকে মুক্ত হন তিনি। সেই থেকে কিছুদিন নিজ বাড়ীতে থাকেন ।

গতকাল ২৬ আগষ্ট সে তার প্রথম স্ত্রীও সন্তাদের নিয়ে সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরজব্বর গ্রামে তার নির্মিত বাড়ীতে চলে আসেন, সন্ধ্যায় স্থানীয় দক্ষিন ওয়াপদা বাজারে গেলে স্ত্রী সন্তান রেখে স্কুল ছাত্রীকে নিয়ে কেন পালালেন এলাকাবাসী প্রশ্ন করলে নুর আলম ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে বাজে কুটুক্তি করেন, তার এমন আচোরনে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়। জনতার হাতে মার খেয়ে সাথে সাথে বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে, স্ত্রীর শোর-চিৎকারে পাড়া প্রতিবেশী এসে আয়েশাকে উদ্ধার করে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে আহত আয়েশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

এব্যাপারে পূর্ণিমার বাবা ফারুকের সাথে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা প্রাথমিক ভাবে মেয়ে হারানো গেছে মর্মে একটি সাধরান ডায়রি করেন, এবং নিতি বিস্বস্থ সূত্রে জানতে পেরেছেন, নুর আলম তার মেয়েকে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে ও করেছেন। বিবাহের উপযুক্ত না হতেই কি ভাবে বিয়ে করলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মেয়ে দেখতে শুনতে বড় হয়ে গেছে, এর চেয়েও ছোট মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে। পরে তিনি ফোন কেটে দেন।

নুর আলম হুজুরের স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী আয়েশা বলেন, সে সমাজের ঈমাম ছিল, সে এমন জগন্য কাজ করবে আমি ভাবতেও পারিনি, তার এমন কর্মকান্ডে বাধাঁ দিলে সে আমাকে প্রায় মারধর করে, নির্যাতন করে, আমার বাবাও একটি সমজিদের ঈমাম আমি মান সম্মানের ভয়ে মুখ খুলিনি। তার অত্যাচারে আমার দ্বিতীয় সন্তানও মারা যায় । বর্তমানে পূর্নিমার পরিবার আমাকে হুমকি দিচ্ছে। এখন আমি নুরল আলমের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্ততি নিচ্ছি এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

গণধোলাইয় ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত নুর আলমের সাথে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে গণধোলাই দেয়া হয়নি এবং এ বিষয়ে সংবাদ না করতে হুমকি প্রদান করে।

এলাকাবাসী জানান, নুরুল আলম এর আগেও একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করেছে, সমজিদের ঈমাম ছিলো তাই আমরা ভালো মনে করে কোন প্রতিবাদ করিনি। সে একটা লম্পট, এলাকার হতদরিদ্র মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট করাই ছিল তার মূল কাজ, এসব চরিত্রহীন কিছু শিক্ষকের কারনে আজ আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। আমরা নুর আলমের উপযুক্ত সাজা চাই।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে চরজব্বর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহেদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, আগেই পূর্নিমার বাবা একটি জিডি করেছেন, নুরুল আলমকে আসামী করে কেউ অভিযোগ করলে আমি আইনী ব্যাবস্থা নিবো।

উল্লেখ্য, গত ২১ এপ্রিল চর ওয়াপদা ইউনিয়নের পূর্ব চরজব্বর গ্রামের মোঃ ফারুকের মেয়ে স্থানীয় সুবর্ণচর গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী বিবি আমেনা ওরফে পূর্নিমা আক্তার (১৪) কে প্রেমের ফাঁদে পেলে অজানার উদ্দ্যেশ্য পাড়ি জমায় লম্পট নুর আলম। সে থেকে অনেক খোঁজাখুজি করেও তাদের পাওয়া যায়নি। মেয়ের বাবা মোঃ ফারুক এবিষয়ে চরজব্বর থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেন নং- ৩২৫/ ২০১৯। তিন সন্তানের জনক নুর আলম স্কুল ছাত্রীকে নিয়ে সাড়ে ৩ মাস চট্রগ্রামে থাকার পর এলাকায় এলে স্থানীয় প্রশাসন তাকে বাল্যবিাহের অপরাধে সাজাদেন, সাজা শেষে বাড়ীতে এলে এলাকাবাসী তার এমন অসামাজিক কর্মকান্ডের জন্য তাকে গণধোলাই দেয়।

Sharing is caring!