নাসির উদ্দিন শাহ নয়ন ॥ গ্রীষ্মে শীতলপাটির শীতল অনুভূতি গ্রাম-বাংলার মধ্যবিত্ত গৃহে শুধু অপরিহার্যতার পরিচয় বহন করে এমন নয়; বরং রেওয়াজ নীতির ধারক ও বাহক বটে। আর এই শীতল পাটির যে উপকরণ তা হলো মোস্তাক গাছের বাকল বা ছাল। এটি একেক জায়গায় একেক নামে পরিচিত।
কেউ বলেন সুরতা, কেউবা বেতি কিংবা মোস্তাক গাছ। একনজর দেখলে যে কেউ চিনতে পারবেন প্রকৃতির এই সম্পদকে। এর ছাল বা বাকল দিয়ে তৈরি হয় শীতলপাটি, চাটাই ও পাখাসহ নিত্য ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্র। কুবের পত্নীর নাম ছিল সুরতা। সেখান থেকে নামটি এসেছে কি-না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। তবে প্রকৃতির এ সম্পদকে সবাই ওই নামেই ডাকে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লায় একসময় সুরতা জন্মাতো। বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় এর নাম মোস্তাক গাছ।
এখন সুরতা আনতে হয় ভারত থেকে। অবহেলা আর অযত্নের ফলে প্রকৃতির এ সম্পদ গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শীতলপাটিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদাতো আর কমেনি। ফলে ভারত থেকে চোরাই পথে সুরতা আসছে। চোরাকারবারিরা এ সুযোগ ষোলআনা ব্যবহার করছে। সুরতা বা মোস্তাক গাছ আগের মত প্রচুর না জন্মালেও অনেকে তা বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একসময় ছিল মোস্তাক গাছের ঝাড় বা বাগান। সাধারণত পুকুর, ডোবা অর্থাৎ জলাশয়ের পাড়ে এগাছ বেশি জন্মে। গাছটি উৎপাদনে কোনো প্রকার সার, ওষুধ বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ফলে প্রায় বিনা খরচে সহজেই এ গাছের বংশবৃদ্ধি সম্ভব।
বছরের যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক গাছের মূল বা মাথা কেটে অন্যত্র রোপনের মাধ্যমে এর বংশ বৃদ্ধি সম্ভব। চারা গজায়। গাছটি প্রায় ৪/৫ হাত লম্বা হয়। মোস্তাক গাছের ছাল বা বাকল দিয়ে তৈরি শীতল পাটির দাম হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রকৃতি ও সম্পদের চাষাবাদ এবং উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর সহজে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে এ শিল্পের আরো উন্নতি সম্ভব বলে কয়েকজন কুটির শিল্প ব্যবসায়ী অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

Sharing is caring!