ডা: শফিকুল ইসলাম স্বপন:

সয়াবিনের দাপটে নারিকেল তেলে রান্না কমলেও এখনও অনেকের পছন্দেই রয়েছে তা। এই নারিকেল তেলে রান্না খাবার যে সুস্বাদু, তা নিয়ে সংশয় না থাকলেও এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না খারাপ, তা নিয়ে পুষ্টি বিশারদদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি।

হার্ভার্ডের ‘টি এইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেলথ’র অধ্যাপক কারিন মিচেলস সম্প্রতি এক সেমিনারে নারকেল তেলকে ‘বিশুদ্ধ বিষ’ বলার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ফ্রেইবার্গের এই অধ্যাপকের খ্যাতি থাকায় তার মতকে একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছে না।
মিচেলসের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারিকেল তেলকে খুব স্বাস্থ্যকর উপাদান হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও তা আদতে তেমন কিছু নয়। সব চেয়ে কুখাদ্যের মধ্যে অন্যতম এই নারিকেল তেল!

এই দাবির ভিত্তি হিসেবে তিনি বলেন, নারিকেল তেলের ৮০ শতাংশই ভর্তি স্যাচুরেটেড ফ্যাটে, যা রেড মিট বা মাখনের চেয়েও বেশি। তাই এর প্রভাবে কোলস্টেরল, হৃদযন্ত্রের অসুখ, ওবেসিটি কিছুই অসম্ভব নয়। শরীরে লাইপোপ্রোটিন কমিয়ে দিতেও পারে নারিকেল তেল।

মিচেলসের বক্তব্য সমর্থন করে ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ বলছে, নারিকেল তেলে রান্না যেখানে জনপ্রিয়, সেই অঞ্চলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও মৃত্যুর হার বেশি।

মিচেলসের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, নারিকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই তবে ‘বিষ’ বলা যায় না।

‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলা হয় হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডই যে কেবল নানা অসুখবিসুখ বাধিয়ে মৃত্যুর দিকে মানুষকে ঠেলে দেয় এমনটা নয়। বরং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের চেয়েও ক্ষতিকারক নন স্যাচুরেটেড ফ্যাট, আর সে সবও কম-বেশি আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকেই। এমনকি ভাতের মধ্যেও রয়েছে খুব সহজে দ্রবীভূত হয় না এমন ফ্যাট তাই ভাত থেকে জন্মানো গ্লাইকোজেন গলতেও অনেক সময় লাগে।

আমেরিকার আরেক মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যান্সেট’ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল খাওয়া দাওয়াই নয়, হার্টের অসুখে থাকে আরও নানা কারণ। তাই এর এতটা সরলীকরণ করা ঠিক হবে না।
নারিকেল তেলে রান্না যেখানে চলে, সেই ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীও যুক্তরাষ্ট্রের বিচেলসের বক্তব্য মেনে নিতে নারাজ। তার মতে অতিরিক্ত তেলই শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।

তার জন্য নারিকেল তেলকে আক্রমণের কোনো কারণ নেই বরং নন স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্যাচুরেটেড ফ্যাটের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করে।

গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট ভাস্করবিকাশ পাল বলেন, বিদেশে কীভাবে নারিকেল তেল ক্যানবন্দি হচ্ছে ঠিক কোন পদ্ধতিতে তারা তা সংরক্ষণ করে এ সবের উপরও তার গুণাগুণ নির্ভর করে।

তাছাড়া ভারতের আবহাওয়া ও বিদেশের আবহাওয়াও এক নয়। এ দেশে যা খেলে নিরাপদ ও দেশে তা-ই বিপদের। তিনি আরো বলেন, তাই এ দেশে এখনই নারিকেল তেল নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তবে তেল বেশি খাওয়া কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। তাই বর্জন করুন অতিরিক্ত তেলের রান্না।

Sharing is caring!