জাতীয়, সারা বাংলা | তারিখঃ নভেম্বর ১০, ২০১৯
এনকে টিভি ডেস্ক:
বাংলাদেশমুখী প্রায় প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় প্রথম আঘাত হানে সুন্দরবনে। বাংলাদেশের ‘ফুসফুস’ খ্যাত এই ম্যানগ্রোভ বন প্রতিবারই বুক চিতিয়ে লড়াই করে রক্ষা করে বাংলাদেশকে। কমে যায় প্রাণহানি এবং সম্পদহানির পরিমাণ। এবারও এর ব্যতিক্রম হলো না।
প্রবল শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনে বাধা পেল। প্রথমে ভারতীয় অংশের সুন্দরবনের সাগরদ্বীপে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করে। এরপর এটি বাংলাদেশের সুন্দরবনের খুলনা অংশে ঢুকে পড়ে। দুই দেশের সুন্দরবনের গাছপালায় বাধা পেয়ে দুর্বল ‘বুলবুলের’ কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার কমে যায়। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতাও কমে আসে।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা। শনিবার রাতে এটি আঘাত হানে বাংলাদেশেও। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবনের উপর দিয়ে আসায় গতি-শক্তি অনেকটাই কমে গেছে। ফলে বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরে আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছর যতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার অধিকাংশই সুন্দরবনকেন্দ্রিক হওয়ায় রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ সুন্দরবন অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় বেশিদূর এগোতে পারে না। তার আগেই ঘূর্ণিঝড়গুলো দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু একই ঘূর্ণিঝড় যদি বরিশালকেন্দ্রিক হতো তাহলে বাংলাদেশের জন্য বড় দুর্যোগ বয়ে আনতো। সুতরাং, একথা বলা অনস্বীকার্য যে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এদিকে জানা গেছে, প্রবল শক্তি নিয়ে শনিবার রাত ৩ টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুলের আঘাতে নিমিষেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন। বনের বিপুল সংখ্যক গাছপালা উপড়ে পড়েছে ও ভেঙে গেছে।
শ্যামনগরের ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবনের অনেক গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।
আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সারাদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। রাজধানীসহ ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকারী অঞ্চলগুলোতে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply