এনকে টিভি ডেস্কঃ  দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মানেই ‘এমপি হওয়া নিশ্চিত’ মনে করছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। যদিও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে।

 

কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে আর সেভাবে দেখছেন না। তারা মনে করছেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মানেই সংসদ সদস্য হওয়া একপ্রকার নিশ্চিত! ফলে দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আবেদন ফরম কেনার প্রবণতা বেড়েছে।
 

এর পেছনের কারণ হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবকেই দায়ী করা হচ্ছে। কারণ আসন্ন উপ-নির্বাচনগুলোতে বিএনপি বা শক্তিশালী কোনো প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কি না, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তারা শক্তিশালী তা নিশ্চিত নয়। ফলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরই জয় হবে।

 

সম্প্রতি ৩টি শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আরও ২টি আসনে উপ-নির্বাচনের তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে। এই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে শামিল হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের যে ‘ভিড়’ তা চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আকুলতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দলের মধ্যে।

 

সম্প্রতি এই আসনগুলোর উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রার্থীর খোঁজে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়। এই ৫টি আসনে দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য ১৪১ জন নেতাকর্মী আবেদন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার একটি আসনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৬ জন প্রার্থী ফরম জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ এরা প্রত্যেকেই দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন!

 

এ প্রবণতার বেশ কিছু কারণ খুঁজে বের করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, মনোনয়ন পেলে সহজে বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা, খরচের স্বল্পতা বা বিনা খরচে নির্বাচনে জয়ী হওয়া, যোগ্য প্রার্থীর অভাব, দলের মধ্যে ব্যক্তিগত প্রভাব তৈরি, দলের কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৩ জন, পাবনা-৪ আসনে ২৮ জন, ঢাকা-৫ আসনে ২০ জন এবং ঢাকা-১৮ আসনে ৫৬ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছিলেন ৪০২৩ জন, যা গড়ে প্রতি আসনে ছিল ১৩ জনের মতো। কিন্তু ৫টি আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য যে সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করেছেন তা ওই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এই ৫টি আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য গড়ে মনোনয়ন ফরম কিনেছে ২৮ জনের বেশি।

 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, দলীয় মনোনয়ন পেলে বা দলীয় প্রার্থী হতে পারলে এমপি হওয়া নিশ্চিত। বিজয় নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা বা নিলেও তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে না। বিএনপি অংশ না নিলে বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে অর্থও খরচ হবে না। কোনো কোনো আসনে যোগ্যতার দিক থেকে প্রভাবশালী কোনো দলীয় প্রার্থী না থাকায় এত নেতাকর্মী আগ্রহ দেখাচ্ছে। আবার দলীয় মনোনয়নের আবেদনকে তারা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অর্জন হিসেবে ব্যবহার করে পরবর্তী সময়ে। তারা বিশেষ করে দলীয় পদ পাওয়া বা রাজনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে থাকে এই সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার নাম ভাঙিয়ে।

 

তাছাড়া ফরম কেনা বা প্রার্থী হওয়ার আবেদন করা দলের প্রত্যেক সদস্যের গণতান্ত্রিক অধিকার।

 

এ ব্যাপারে দলের গঠনতন্ত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বা প্রার্থীতার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। এসব কারণেই আবেদনকারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, দলের জন্য কোনো অবদান নেই, ওয়ার্ড কমিটির সদস্য হয়েছে, দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য এরাও মনোনয়ন ফরম কিনছে।

 

এ প্রবণতার কারণে দলের নেতাদের মধ্যে একটি অস্বস্তি কাজ করছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। একইসঙ্গে এ বিষয়ে একটা নীতিমালা হওয়া উচিত বলে তাদের অভিমত।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “ফরম কেনার ব্যাপারে কাউকে তো আর নিষেধ করা যাবে না। দলের সবারই মনোনয়ন কেনার অধিকার আছে। তারা মনে করছে, দলের মনোনয়ন পেলেই সহজে এমপি হওয়া যাবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা বা সিরিয়াসলি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কিনা তার ঠিক নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে টাকা পয়সাও খরচ হবে না। অনেকেই সিভি ভারি করার জন্যও ফরম কেনে। তবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের সংসদীয় বোর্ড যাচাই-বাছাই করেই যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে থাকে। ”

 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। মনোনয়নের জন্য আবেদন করার অধিকার সবারই আছে। তবে কোথাও কোথাও আবেদন বেশি হয় যোগ্য প্রার্থী না থাকার কারণে। ঢাকা-১৮ আসনে এমপি ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। এই আসনে তার সমকক্ষ কোনো প্রার্থী না থাকার কারণেই সেখানে আবেদন বেশি হয়েছে। ”

 

“দলীয় আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবান, ত্যাগী, যোগ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়। রাজাকার, জঙ্গিবাদী মতাদর্শের কেউ মনোনয়ন পাবে না এটাই আমাদের দলের নীতি। আগামীতে আরও শক্তভাবে এই বিষয়গুলো দেখা হবে। কেউ দলের ভাবমূর্তি যেন নষ্ট করতে না পারে সে জন্য একটা শক্ত নীতিমালা দরকার। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির আগামী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ’ যোগ করেন তিনি।

 

Sharing is caring!