আল জিহাদ ॥ ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার জেলা শহরের ফকিরপুর এলাকা থেকে সাপ্তাহিক আজকালপত্র ও এনকে টিভি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয় থেকে আমরা সাত সহযোদ্ধা রওনা দিলাম হাতিয়ার টাংকিরঘাট এলাকার উদ্দেশ্যে। পথে সোনাপুর জিরোপয়েন্টে যাত্রা বিরতি দিতে হলো। কারণ এখান থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন- নোয়াখাইল্যা চাচার বয়ান খ্যাত সাংবাদিক মো. আসাদুল্যাহ মিলটন এবং এনকে টিভির সম্পাদক ও আজকালপত্র পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাহ নয়ন। কথা ছিল- সকাল ৯টায় আমরা সোনাপুর ছেড়ে যাবো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে যাত্রা বিঘ্নিত হলো। প্রায় ১১টার দিকে আমরা সোনাপুরকে পেছনে ফেলে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছি টাংকির ঘাট এলাকার উদ্দেশ্যে।
আর এ ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল- এনকে টিভির জন্য একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা। পাশাপাশি শহরের ইট-পাথরের প্রাচীর ভেঙে একঘেঁয়েমি দূর করাও ছিল আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
যদিও এ ভ্রমণটি আমাদের আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি একঘেঁয়েমি দূর করতে সাহায্য করেছিল। আনন্দ এবং একঘেঁয়েমি দূর করার পাশাপাশি সেদিনকার এ ভ্রমণ আমাদের নানা বিষয়ে শিক্ষাও দিয়েছে। সিনিয়র সহকর্মীদের সাথে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়ে অনেক কিছু শিখেছি।
যদিও মানুষের জীবনে ভ্রমণ সবসময় একরকম হয় না। কিছু ভ্রমণ খুব বেশি আনন্দের হয়, আবার কিছু ভ্রমণ খুব কষ্টেরও হয়ে থাকে। ভ্রমণ মানুষকে পৃথিবী সম্পর্কে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। টাংকির ঘাটে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম রূপবৈচিত্র্য দেখে। তখন ভাবতে শুরু করলাম- মহান রবের এ বিশাল আকাশের মেঘমালা দেখেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
টাংকির ঘাটের ভ্রমণ নিয়েই যখন লিখা আরম্ভ করেছি, তখন বলতে হয়- এটি আমার জীবনে একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ। যা সম্পর্কে না লিখলেই নয়। সাপ্তাহিক আজকালপত্র ও এনকে টিভি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম পরিবারের হাত ধরেই এমন একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখার অনুমতি পেয়েই নিজেকে বড় সৌভাগ্যবান মনে হলো। ধন্যবাদ জানিয়ে কাউকে ছোট করবো না। কারণ সিনিয়রদের হাত ধরেই যেতে চাই অনেকদূর।
৪ সেপ্টেম্বর বুধবার অফিসে বসে আমাদের ভ্রমণে যাওয়ার তারিখ ঠিক হয়- ৭ সেপ্টেম্বর। ভ্রমণের স্থানগুলো ছিল জেলার উল্লেখযোগ্য কিছু রোমান্টিক স্থান। যেমন- হাতিয়া, টাংকিরঘাট, সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল, সোলেমান বাজারসহ আরো কয়েকটি জায়গা। সড়কের পাশে সারি সারি গাছ। দৃষ্টির সীমানার পুরোটা ফোকাসজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। অপরূপ প্রকৃতির সাজে সাজানো সবুজের দৃষ্টিকে সম্মোহন করে হাতছানি দিতে থাকে টুকরো টুকরো নিবিড় বনভূমি। এর পাশাপাশি রয়েছে টাংকিরঘাটে মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউ। বৈরী আবহাওয়া আর জলোচ্ছ্বাসের গর্জন যখন কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে- উদ্বেল করবে আপনার ভাবনার জগতকে, ঠিক তখনই অন্যপাশের সবুজ দ্বীপ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি আপনাকে দেবে নিবিড় ভালোলাগার এক চিরসবুজ প্রশান্তি।
আমাদের যাত্রার দিনটি ছিল শনিবার সারাদিন মাথার উপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। মেঘের গর্জন, আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল ছিল হাতিয়া বাজার ও টাংকিরঘাট। একটির পর একটি মোটরসাইকেল সারিবদ্ধভাবে ছুটে চলেছে প্রকৃতির অপূর্ব সেই মহিমায় হারিয়ে যেতে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টিভেজা সেই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে টং দোকানের চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার কথা উল্লেখ না করলেই নয়।
বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে অবশেষে আমরা পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্যস্থল টাংকিরঘাট। ছোট-বড় ডিঙ্গি নৌকা এলোমেলোভাবে ঘাটে বাধা। মাঝিরা কেউ কেউ জাল বুনছেন, অনেকে আবার মাছ ধরে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। আমাদের টিমের সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মেঘনার সেই প্রাণছোঁয়া দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলেন। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, মেঘের গর্জন, বাতাসের শন শন শব্দ, পালতোলা ডিঙ্গি নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে চলতে থাকার দৃশ্য- মনের ভেতর এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। এর ভেতর শুরু হয়েছে নাসির উদ্দিন শাহ নয়নের ডকুমেন্টারি তৈরি। কাট-ওকে’র ভেতর এক সময় শেষ হয় ডকুমেন্টারি তৈরি। সেখান থেকে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল মহিষের পালের খোঁজে। কিন্তু বৃষ্টি সেদিন আমাদেরকে এমনভাবে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল যে, আমরা চলার পথে যা অবলোকন করলাম, এর চেয়ে বেশি স্বাদ আর আস্বাদন করা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে শেষ হলো আমাদের টাংকিরঘাট সফর। কিন্তু আমাদের ভ্রমণ শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমে এলো। মনে অনেক আনন্দ থাকলেও ভিতরে ভিতরে সবাই প্রায় ক্লান্ত। এই ক্লান্ত দেহ আর ক্ষুধা ভরা পেট নিয়ে সবাই ছুটলাম মেঘনার সেই মজাদার ইলিশের স্বাদ নেয়ার জন্য। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে পাওয়া গেল আমাদের প্রত্যাশিত মেঘনার সেই সুস্বাদু ইলিশ। তাই দেরি না করেই সবাই খেতে বসে গেলাম। তাজা ইলিশের ঘ্রাণ নাকে পৌঁছানোর সাথে সাথে দূর হলো মনের সব ক্লান্তি।
Leave a Reply