এনকে টিভি ডেস্ক:

 

দেশের প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশকে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এর মধ্যে দফাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলের ১৯তম গ্রেড এবং মহলদাররা ২০ তম গ্রেডে বেতন পাবেন। ২০১১ সালের ২ জুন থেকে এই স্কেল অনুযায়ী তাদের বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধ করতে বলেছে আদালত।

একটি রিট মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।

আগামী বছর ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষ শুরুর আগেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করে আদালতে হলফনামা দিতে স্থানীয় সরকার সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রায়ে বলা হয়েছে, অবসর ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম পুলিশ সদস্যের প্রত্যেকের যোগদানের তারিখ থেকে এই ভাতা গণনা শুরু করতে হবে।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হ‌ুমায়ূন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান।

রায়ের পর আইনজীবী পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে মোট গ্রাম পুলিশের সংখ্যা ৪৭ হাজার। তাদের মধ্যে ৩৫৫ জন রিট আবেদন করলেও এ রায়ের সুবিধা সবাই পাবেন।

গ্রাম পুলিশে প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে একজন করে দফাদার ও ৯ জন করে মহলদার নিযুক্ত আছেন। এদের মধ্যে দফাদাররা এতদিন মাসে সাকুল্যে ৭ হাজার টাকা এবং মহলদাররা ৬৫০০ টাকা বেতন পেয়ে আসছিলেন।

গ্রাম পুলিশের চাকরি সরকারের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এই বেতনের অর্ধেক দিত ইউনিয়ন পরিষদ, বাকিটা আসত সরকারের কোষাগার থেকে।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী এখন দফাদারদের মূল বেতন ৮২৫০ টাকা এবং মহলদারদের ৮৫০০ টাকা থেকে শুরু হবে।

ব্রিটিশ আমল থেকে এ বাহিনী বিভিন্ন আইনের অধীনে কাজ করে আসছে। সর্বশেষ স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ সালের অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

এ আইনের অধীনে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ বাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃংখলা ও চাকুরির শর্তাবলী সম্পর্কিত বিধিমালা তৈরি করা হয়। কিন্তু বিধিতে তাদের কোনো শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়নি।

এদিকে ২০০৮ সালের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রাম পুলিশদের ৪র্থ শ্রেণির স্কেল নির্ধারণে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে গ্রাম পুলিশের সদস্যদের জাতীয় বেতন স্কেলের চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর ধামরাইয়ের টুপিরবাড়ীর হাটকুশারা এলাকার বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ লাল মিয়াসহ ৫৫ জন গ্রাম পুলিশ হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করে।

আইন অনুসারে চাকরির সকল সুবিধাসহ আবেদনকারী গ্রাম পুলিশদের চাকরি সরকারের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে নিস্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং গ্রাম পুলিশের চাকরি জাতীয় বেতন কাঠামো অনুসারে চতুর্থ শ্রেণির স্কেলের সমমর্যাদা কেন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

পরে এ রিটে যুক্ত হয় আরও ৩০০ জন গ্রাম পুলিশ। চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় দিল আদালত।

Sharing is caring!