বিশেষ প্রতিনিধিঃ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন,
মহাত্মা গান্ধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আইন লঙ্ঘন করেননি। যার কারণে তাঁর সময়ে দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে গান্ধীজির অহিংস নীতি অনুযায়ী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছে।
.

২ (অক্টোবর) বিকেলে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর গান্ধী আশ্রমে মহাত্মা গান্ধীর ১৫২ তম জন্মদিনের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
.
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন আরও বলেন, নোয়াখালীবাসীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। কারণ তারা ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত গান্ধীজির পদাঙ্ক অনুসরণ করে অহিংসনীতি অবলম্বন করে আসছেন। তাই এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়নি। অহিংস নীতি অনুসরণ করা হয়নি বলে মায়ানমারে দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে। সারাবিশ্বে গান্ধীজির অহিংসনীতি অনুসরণ করলে যুদ্ধবিগ্রহ এড়ানো যাবে।
.
ড. আবদুল মোমেন আরও বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু যতোগুলো আন্দোলন করেছেন তার সবগুলোই গান্ধীজির মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তবে গান্ধীজি যখন অহিংস নীতির কথা বলেছিলো তখন ভারত বর্ষের দুই শতাংশ মানুষ তা গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু ১৯৭১ সালে যখন বঙ্গবন্ধু অহিংস নীতির ডাক দিলেন তখন ৯৯ শতাংশ বাঙালি তা পালন করেছিলো।

.
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, গান্ধীজির জীবন ও বাণী আজও প্রাসঙ্গিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধতম জন্মদিনের জাতিসংঘে বলেছিলেন, গান্ধীজীর সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং অহিংসার আদর্শ তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে অবদান রেখেছিল।

.

আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংসদ সদস্য মিজ অরোমা দত্ত, জাতিসংঘের অন্তবর্তী কালীন প্রতিনিধি তৌমু পউতি আইনেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সভাপতি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
.

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের মতো নোয়াখালীতেও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সেই দুঃসময়ে শান্তি মিশন নিয়ে নোয়াখালী ছুটে আসেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৪৭ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত নোয়াখালী অবস্থানকালে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্ব স্থাপনসহ সেবামূলক বিভিন্ন কাজে হাত দেন। এভাবে ১৯৪৭ সালের সালের ২৯ জানুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ গ্রামে গান্ধীর আগমন ঘটে।
.
জয়াগের তৎকালীন জমিদার ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ নিজ জমিদারির সব সম্পত্তি মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য গান্ধীকে দিয়ে দেন। এরপর জমিদার বাড়িতে গড়ে ওঠে গান্ধী শান্তি ক্যাম্প। বাড়ির পাশে একটি কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন গান্ধী। যা পরে গান্ধী মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে জাতীয়করণ করা হয়। যেখানে কর্মমুখী শিক্ষার পাশাপাশি গান্ধীর সাতটি অহিংস নীতি-নীতিহীন রাজনীতি, নৈতিকতাহীন বাণিজ্য,পরিশ্রমহীন সম্পদ, চরিত্রহীন শিক্ষা, মানবতাহীন বিজ্ঞান, বিবেকবর্জিত আনন্দ ও ত্যাগহীন অর্চনা জীবন দর্শন সম্পর্কে আগামী প্রজন্মদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তারাও জানতে পারছে মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে।
.
১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ‘গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট’ অর্ডিন্যান্স গঠনের মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যে গান্ধীর জীবন দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ও বিভিন্ন সেবামূলক কাজ শুরু করা হয়।

Sharing is caring!