এনকে টিভি প্রতিবেদক:

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে প্রবাসীকে ভয় দেখিয়ে আদায় করা টাকা কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহারের পর আদায়কৃত টাকা ফেরত দিলেন অভিযুক্ত উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শিশির কুমার বিশ্বাস।

বুধবার ভুক্তভোগী আরব আমিরাতের দুবাই প্রবাসী ফাতেমা বেগম এসআই শিশির কুমারের ১২হাজার টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে নোয়াখালীর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিমকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। পুলিশের অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করার পর থেকে প্রবাসী পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

লিখিত ওই অভিযোগে জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর সোমবার রাত ৯টায় ফাতেমা বেগমের অনুপস্থিতিতে তার বোনের শ্বশুরবাড়ীতে গিয়ে তার শ্বশুর মো. ইলিয়াছকে অভিযুক্ত এসআই শিশির কুমার বিশ্বাস হাতিয়ে নেয়া ১২হাজার টাকা ফেরতসহ আরো অতিরিক্ত ২০হাজার টাকা দিতে চায়।

কিন্তু বৃদ্ধ ইলিয়াছ টাকা রাখতে না চাইলে শিশির কুমার বিশ্বাস টেবিলের ওপর ১২হাজার টাকা রেখে চলে যায় এবং যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে বলে, “অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তোমাদের অবস্থা ভালো হবে না”। ওই রাতে ফাতেমা বেগম তার ভিসার বিষয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিল। এসআই শিশির কুমারের টাকা রেখে আসার বিষয়ে তার বোনের শ্বশুর মো. ইলিয়াছ তাৎক্ষণিকভাবে মুঠোফোনে ফাতেমাকে জানায়।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী প্রবাসী ফাতেমা বেগম আরো উল্লেখ করে বলেন, এসআই শিশির কুমার বিশ্বাস ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া ১২হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আসলেও এখনও তিনি ও তার সহযোগি স্থানীয় কয়েক জনের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য নানা ধরনের ভীতি সৃষ্টি করছে। এছাড়াও পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে করা অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে নানা ধরনের মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন। ফাতেমা বেগম অভিযুক্ত এসআই শিশির কুমার বিশ্বাসসহ অপরাপরদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি প্রত্যাহার করবেনা বলে এবং ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চেয়ে নোয়াখালী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিমকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম দীর্ঘদিন ধরে আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী আলী আহম্মদ আবদুল্লাহ শেখ (৬০) এর অধীনে চাকরি করেন। একইভাবে তাঁর দুই ভাইসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন একই মালিকের (কফিল) দুবাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আসছেন। গত ৩ নভেম্বর আরব আমিরাতের নাগরিক আলী আহম্মদ শেখ তাদের সাথে আরব আমিরাত থেকে কোম্পানীগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এরপর তিনি তাঁর থাকার সুবিধার্থে বসুরহাটে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তাঁরা পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে তাদের বাসায় কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই শিশির কুমার বিশ্বাসসহ কয়েকজন বহিরাগত লোক যান। তিনি ঘরে ঢুকে নানা অশ্লীল কথাবার্তা বলেন পরিবারটিকে।

একপর্যায়ে তাদেরকে থানার ওসি পরিচয় দিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে দুজনকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। এ সময় তিনি শিশিরকে ‘ভাই’ ডেকে তাঁর হাতে-পায়ে ধরে এ বিষয়ে কোনো কিছু না করার আকুতি জানান। পরে এসআই শিশিরের হাতে ১২ হাজার টাকা তুলে দিলে তিনি চলে যান। এ ঘটনায় গত ৩০ নভেম্বর শনিবার রাতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের নির্দেশে অভিযুক্ত এসআই শিশিরকে কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে নোয়াখালী জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

নোয়াখালীর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম এর সাথে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসআইয়ের টাকা ফেরত দেওয়া এবং প্রবাসী ফাতেমা বেগমের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লিখিত অভিযোগটি আমার হস্তগত হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ ছাড়াও ঘটনার সাথে স্থানীয় যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি’কে ঘটনার সাথে জড়িত স্থানীয়দের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া আছে।

Sharing is caring!