এনকে টিভি প্রতিবেদকঃ

করোনাভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি সৌদিফেরত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জিনারুল নামে ৩৩ বছর বয়সী ওই যুবক গত শনিবার (৭ মার্চ) সৌদি আরব থেকে ফিরে ভারতের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা রাজ্যটিতে এই প্রথম। এই মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

 

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম পলাশপাড়ার বাসিন্দা জিনারুল হককে রোববার (৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

 

খবরে বলা হয়, জিনারুল গত পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে কাজ করছিলেন। গত শনিবার সকালেই তিনি সৌদি থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছান।

 

জিনারুলের এক আত্মীয় মোবিন শেখ বলেন, রোববার সকালে বিমান থেকে নামার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি পৌঁছান জিনারুল।

 

পরিবারের সদস্যরা জানান, জিনারুলের রক্তে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত বেশি ছিল। সে কারণেই চিকিৎসার জন্য তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন।

 

মোবিন আরও বলেন, বাড়ি পৌঁছনোর পর থেকেই তিনি অসুস্থবোধ করছিলেন। রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। তখন তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাতেও তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রোববার সকালে তাকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

হাসপাতাল সূত্র বলছে, প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় জিনারুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যেহেতু তিনি সদ্য সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নাইসেডে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়।

 

এ দিন সকালে সৌদি থেকে আসার পর আরও এক যাত্রীর বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিং টেস্টে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ব্যক্তিও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, দুজন জিনারুলকে আনতে গিয়েছিলেন। এমনকি শুধু তারা নন, জিনারুলের পরিবারের বাকি সদস্য, তিনি যে গাড়িতে এসেছিলেন সেই যাত্রীরা, অর্থাৎ জিনারুলের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের সবাইকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এমনকি রিয়াদ থেকে দুবাই হয়ে যে বিমানে তিনি কলকাতায় পৌঁছান, তাদেরকেও চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

 

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, জিনারুল রওনা হওয়া থেকে তার হাসপাতালে পৌঁছানো পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের চিহ্নিত করতে অনেকটা সময় প্রয়োজন।

 

সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, যদি জিনারুল আগেই আক্রান্ত হয়ে থাকতেন, তাহলে বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিং টেস্টে ধরা পড়া উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে জিনারুল ওই টেস্ট পাস করে গিয়েছিলেন। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে তার পরিবারের লোকজনের ওপরেই নজর রাখছি।

 

এদিকে সৌদিতে নতুন করে আরো চারজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ রেকর্ড করেছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। রোববার সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টুইটারে এমন তথ্য জানিয়ে বলেছে, আক্রান্তরা ইরান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে এসেছেন।

 

মধ্যপ্রাচ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছে ইরান থেকে। ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে এ ভাইরাস সংক্রমণে ১৪৫ জন মারা গেছে। চীনের বাইরে ইতালির পর ইরানেই এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

 

ইরানে নাগরিকদের ভ্রমণ বাতিল করেছে সৌদি আরব। কোনো সৌদি নাগরিক সেখানে ভ্রমণ করলেও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

 

এছাড়া বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের কাতার ভ্রমণ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এনকে/টিভি/ডেস্ক/হাসিব

Sharing is caring!