আইনস্টাইন ও আপেক্ষিক তত্ত্ব

                মোঃ কামরুজ্জামান সোহাগ।

যদি কাউকে বলা হয় একজন অমনোযোগী ছাত্র পড়িয়ে সবচেয়ে ভালোফল অর্জন করিয়ে দিতে পারবেন? তিনি অবশ্যই বলবেন এটা কি করে সম্ভব। আজ আমরা এমনি একজন ছাত্রের কথা বলব, যে ছাত্র সব সময় অমনোযোগী হওয়ায় তার শিক্ষক তাকে ক্লাশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং তার মাকে ডেকে বলেছিলেন, আপনার এই হাবাগোবা ছেলেকে দিয়ে কিছুই হবে না। আজ সেই ছেলে কিনা বিশ্বের বুকে সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হয়েছিল। এই বিজ্ঞানীর নাম “আলবাট আইনোস্টাইন” তিনি কালজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী হয়েছিলেন। ছোটকাল থেকে আইনোস্টাইন বোকা এবং শান্ত সভাবের ছিলেন। চার বৎসর বয়স পর্যন্ত কোন কথাই বলেননি। বই পড়তে শেখেন সাত বৎসর বয়সে। তাই তার বাবা মা ভাবতেন ছেলেটি হয়ত কথাই বলতে পারবেনা। এই জন্য দুচিন্তার শেষ ছিলনা তাদের। কিন্তু একদিন রাতে ঘটল এক মজার ঘটনা খাবার টেবিলে আইনোস্টাইনের মা তার জন্য স্যুপ রান্না করে রাখলেন, এরপর তাকে খাবার টেবিলে ডেকে স্যুপ খেতে দিলেন। কিন্তু হঠাৎ আইনোস্টাইন বলে উঠলেন মা, সুপটা খুব গরম, সন্তানের মুখে এমনকথা শুনে সবাই হতোবাক। তার মুখের কথা শুনে বাড়ীর সবাই বললেন আইনোস্টাইন তুমি এতদিন কথা বলনি কেন? তিনি জবাব দিলেন, এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল।
আইনোস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯সালের ২৪শে মার্চ জার্মানীর মিউনিখ শহরে। তবে শৈশবের পর বাকী জীবন কেটেছেন আমেরিকাতে। তার জীবন ছিল খুবই সাদাসিধে। বিজ্ঞানী হওয়াত দুরের কথা তিনি কিছু করতে পারবেন কিনা এমন কথাই ভাবেন নি কেউ। কিন্তু তাত্ত্বিক পদার্থে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কারটাযে এ আত্মভোলা ছেলেটির জন্য অপেক্ষা করছে সে কথা কেইবা জানতো। ছেলেবেলা থেকে আইনোস্টাইন নিরবে কি যেন ভাবতেন। ক্লাশে শিক্ষকরা কোন প্রশ্ন করলে অনেক ভেবে চিন্তে উত্তর দিতেন তিনি। অন্যদের মত হঠাৎ কিছুই বলতে পারতেন না এবং কথা বলার সময় মুখে কথা জড়িয়ে যেত, এই নিয়ে সহপাঠিদের নিকট অনেক তিরস্কারও শুনতে হয়েছে তাকে। আত্মভোলা এই ছেলেটি ছিল সবকিছুতেই ছিল কৌতুহলী। আইনস্টাইনের বাবা একবার তাকে একটা কম্পাস কিনে দিয়েছিলেন। এরপর বালক আইনোস্টাইন সব সময় শুধু এই যন্ত্রনিয়েই থাকতেন। একসময় তার মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগল কম্পাসের কাটা শুধু একদিকেই ঘুরছে কিছুতেই অন্যদিকে ফেরানো যায় না কেন? এবার তার বাবার কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে ছাইলেন আইনোস্টাইন। বাবা তার ছেলের এমন কৌতুহল দেখেই খুব খুশি হয়েছিলেন। তিনি আইনোস্টাইনকে কাটা একদিকে ঘুরার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
কুড়ি বছর বয়সে এই আত্মভোলা ছেলেটি একটি নিবন্ধন রচনা করে সভার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তার নাম ছিল আপেক্ষিকতা বাদ (Relativity)। ছোট বেলায় আলোয় বয়েচলে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখতে আইনোস্টাইন। তাই আলো নিয়ে শত ভাবনাছিল তার। ক্লাশে বসে সূর্যের আলো কিংবা বাড়ীতে বসে বিদ্যুতের আলো নিয়ে ভাবতে গিয়ে বড়দের কাছে কম বকুনি শুনতে হয়নি তাকে। তাই চৌদ্দ বৎসর বয়সে আলোর রথে চলার বৈজ্ঞানিক পদ্দতি নিয়ে ভাবনা শুরু করেছিলেন আইনোস্টাইন। তবে আপেক্ষিক তত্ত¡ আবিস্কারের চিন্তাই তাকে সবচেয়ে বেশী আলোড়িত করেছে। কারণ বড় হয়েও আলোর রথে চড়ার ভুত তার মাথা থেকে যায়নি। ক্লাশের বাঁধাধরা পড়াশোনা মোটেই ভাল লাগতনা আইনোস্টাইনের। তবুও মায়ের আদেশ স্কুলে না গিয়ে উপায় নেই। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেওয়ালের এককোনে ছুপচাপ বসে থাকতেন আইনোস্টাইন। একদিন সূর্যের আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে ক্লাশের ভিতর আসতে দেখে এর কারণ বুঝতে ভাবনায় পড়ে গেলেন কিশোর আইনোস্টাইন। এই সময় শিক্ষক তাকে দাঁড়াতে বলে পড়া জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু তিনি ক্লাশে অমনোযোগী থাকায় উত্তর দিতে পারলেন না। এতে শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শাস্তি হিসাবে হলরুমে গিয়ে বসার নির্দেশ দিলেন। এই যেন সাপে বর হল, হলরুমটা বড় হওয়ায় স্থানটা পছন্দ হল, সেখানে তিনি নির্জন পরিবেশে ভাবতে ভাবতে ক্লাশের সময় পারকরে দিতেন। আর এই গভীর ভাবনাই ছিল তার গবেষণা। একবার এক তরুন আইনোস্টাইনকে আপেক্ষিক তত্ত¡ সম্পর্কে সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। আইনোস্টাইন বললেন “কেউ যখন কোন সুন্দরীর সাথে এক ঘন্টা গল্প করেন তখন তার কাছে ঐ এক ঘন্টাকে মনে হবে মাত্র এক মিনিট। কিন্তু তাকে যখন উননের কাছে নিয়ে এক মিনিট বসিয়ে দেওয়া হয় তখন তার কাছে মনে হবে সে যেন এক ঘন্টা দাড়িয়ে আছে। আর এটাই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব ”।
  • এনকে টিভি/বি/এস/এম/এস

Sharing is caring!