মেঘনা নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ। অধিকাংশ ট্রলার খালি ফিরছে। কোনো কোনো ট্রলারে অল্প কিছু মাছ। সব মিলিয়ে নোয়াখালীর উপকূলের জেলেদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

সরেজমিনে নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা যেমন বসে আছে ঠিক তেমনি বসে আছে আড়তদাররাও। ঘাটে নেই হাঁকডাক। অধিকাংশ ট্রলার খালি ফিরছে। কোনো কোনো ট্রলারে অল্প কিছু মাছ। যা দিয়ে উঠে না তেলের খরচও।

মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন জেলে আবুল হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের সকল নিয়ম আমরা মানি। অভিযান দিলে মাছ ধরা বন্ধ রাখি। এখন কোনো অভিযান নেই কিন্তু নদীতে মাছও নেই। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সরকারি সহায়তাও পাই না।

ওমর ফারুক নামের আরেক জেলে বলেন, সরকারের সহযোগিতা দরকার। গাঙে (নদী) কোনো মাছ নেই। জাল, নৌকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধারদেনায় টিকে থাকতে পারছি না। আমরা খুব কষ্টে আছি।

জেলে জহির হোসেন বলেন, আমরা নিয়ম মানি কিন্তু সরকারি সহায়তা পাই না। জেলেদের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই হিসেবে যা সরকারি সহায়তা আসে তা খুব কম। আমরা চাই সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করা হোক।

আবদুর রহমান রনি নামের চেয়ারম্যানঘাটের এক আড়তদার বলেন, আড়তে তেমন মাছ নেই। আমরাও বসে আছি। যা আছে সব সামুদ্রিক মাছ। জেলেরা কষ্টে আছে।

কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, নদীতে মাছ নেই তাই জেলেরা হতাশ। সরকার যেসব সহযোগিতা করছে তা যথেষ্ট নয়। আমাদের অনেক জেলে আছেন যারা নদীতে মাছ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন সময়ে তারা বেকার হয়ে পড়েন। আমরা জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করি। তবে জেলে অনুযায়ী এখানে বরাদ্দ খুব কম। বরাদ্দ বাড়ানো গেলে জেলেদের উপকার হতো।

উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হলো নানান প্রতিকূলতার মাঝেও যেন জেলেরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কেননা জেলেরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রান্তিক জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে উপহারস্বরূপ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২০ জেলের মাঝে গরুর বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চাল বিতরণ করা হচ্ছে। বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, আমরা জেনেছি মেঘনা নদীতে তেমন মাছ নেই। সব থেকে বেশি জেলে এই হাতিয়া উপজেলায়। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে কিছু জেলে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে। বিশেষ করে বেহুন্দি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারণে নদীর মাছ, পোনা ও অন্যান্য জীব নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মাছের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। যদি এসব জাল ব্যবহার বন্ধ হয় তাহলে নদীতে আবার মাছের দেখা পাওয়া যাবে।

Sharing is caring!