বাবা আবুল কালাম ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করেন। অভাবের কারণে মায়ের সঙ্গে অভিমানে ঘর ছাড়েন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী পলি আক্তার। কিছুদিন পর ঢাকায় গার্মেন্টসের চাকরি পেয়ে বাবা-মাকে জানান। সেখানে দালালের খপ্পরে পড়ে প্রায় সাত মাস আগে দুবাই যায় পলি। কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পলি। দেশে ফিরতে বাড়িতে স্বজনদের ফোন দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। এখন মেয়েকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাবা-মা।

পলি আক্তার নোয়াখালীর সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের উত্তর শুল্যকিয়া গ্রামের আবুল কালাম ও রহিমা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে।

জানা যায়, অভাবের সংসারের মেয়ের সব শখ পূরণ করতে পারতেন না দিনমজুর বাবা আবুল কালাম ও মা রহিমা বেগম। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিমানে ঘর ছাড়েন মেয়ে পলি আক্তার। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি তারা। কিছুদিন পর জানতে পারলেন মেয়ে ঢাকার পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছে। তারপর দীর্ঘদিন ধরে মেয়ের খবর পাননি। এ বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি বিদেশি নম্বর থেকে বার্তা আসে রহিমা বেগমের মোবাইলে। জানতে পারেন মেয়েকে পাচারকারীরা দুবাই নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করছে। তার মেয়ে পলিকে হোটেলে আটকে রাখা হয়েছে আরও ৩০ জন মেয়ের সঙ্গে। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে নির্যাতন চালানো হয়।

রহিমা বেগম বলেন, স্বামীর ঘর নেই বর্তমানে থাকি বাবার বাড়িতে। লোক লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি মা হয়ে মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করছি তিনি যেন আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমার আর কোনো চাওয়া নেই।

আবুল কালাম বলেন, কান্নার জন্য কথা বলতে পারছিনা। মেয়ে পড়ালেখা করতো ঠিকমতো খরচ দিতে পারতাম না। ইটভাটায় কাজ নিয়ে আমি সেখানে চলে গেছি। বাড়িতে আসি দেখি মেয়ে নাই৷ সব জায়গায় খুজেও মেয়েকে পাই নাই। এখন শুনি মেয়ে দুবাইতে বন্দি আছে। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেয়েকে নির্যাতন করতেছে। কলিজা ফেটে যায় বাবা হয়ে কারো কাছে যেতে পারছি না লজ্জায়।

পলি আক্তারের নানী রাশেদা বেগম বলেন, কত কষ্ট করে নাতিন পড়ালেখা করলো। কার ফাঁদে পড়ে সে এখন নির্যাতনের শিকার। আপনারা আমার নাতিনকে এনে দেন। সে বড় কষ্টে আছে তাকে একটু উদ্ধার করে দেন।

আব্দুল আজিজ নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মেয়েটা বাবা-মায়ের সাথে রাগ করে চলে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। এলাকায় শরমে কাউকে বলতেও পারেনি পরিবার। জানতে পারলাম বিদেশে একটা রুমে আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন ক্লাবে পাঠিয়েও তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে না। দ্রুত মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

নোয়াখালী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আবু ছালেক বলেন, কোনো এক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে মেয়েটি দুবাই চলে গেছে। কোনো কোম্পানির ভিসায় গেলে আমরা সহজেই ওই কোম্পানিকে ধরতে পারতাম। কিন্তু সে ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যেহেতু মেয়েটাকে আটকে রাখা হয়েছে এবং সে দেশে ফিরে আসতে চায়। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদাশিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করব।

Sharing is caring!