মো. সেলিম:

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা (এলজিইডি) তত্বাবধানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এনএনজিপিএস প্রকল্পে চর যাত্রা সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন স্থাপন কাজে লাগাম ছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে।

কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সরকারি কাজ যে ঠিকভাবে হয় না এবং সরকারি কাজ মানেই অনিয়ম, দুর্নীতি আর গাফিলতি তার প্রমাণ আরও একবার পাওয়া গেল চর যাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজে।

এ অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য স্থানীয় এলকাবাসী দুষছেন, এলজিইডির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাহফুজুল হোসাইন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী খুরশিদ আলম’র পদে পদে নিরবতাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তদারকি প্রতিষ্ঠানের উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ছত্রছাছায়ায় শিডিউল অমান্য করে বেজায় নিন্মমানের কাজ করার সুযোগ পায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। নির্মাণ ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে পদে পদে? উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশনায় ও মাঠ পর্যায়ে এ কাজের তদারকি করছে উপ-সহকারি প্রকৌশলী খুরশিদ আলম। অভিযোগ রয়েছে, এ অনিয়মে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও সঠিক তদারকি ছিলনা।

চর যাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিক বলেন, এ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ চলছে প্রায় ৭ মাস ধরে। বিদ্যালয় নির্মাণে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কথা একাধিকবার উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি। ইটের ওপরে কালার আছে, ভিতরে মাঠি। আমরা নামকা ওয়াস্তে আছি, এ অনিয়মের প্রতিকার করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

রোববার (২৪নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গেলে, স্থানীয়রা জানান অভিযোগের পরও বিদ্যালয় নির্মাণ কাজে স্থানীয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে যথাযথ তদারকি করতে দেখা যায়নি। এ সুযোগকের ষোল আনাই কাজে লাগিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদার । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ বিদ্যালয় নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির সকল সীমারেখা ছাড়িয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, বিদ্যালয়টি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। কাজের শুরুতেই নিন্মমানের বালু, নিন্মমানের ইটের খোয়া, নিন্মমানের ইট, নিন্মমানের রড,ব্যবহার করা হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিনহা এন্টার প্রাইজের কর্ণধার ঠিকাদার মো.হানিফ সবুজ বলেন, ইটভাটায় এক নম্বর ইট না থাকায় কিছু দুই নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি ভালো নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেছেন বলে দাবি করেন। তবে এটি কোন প্রকল্পের কাজ এবং প্রাক্কলিত বরাদ্দ সম্পর্কে তার জানা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চর যাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইউপি সদস্য মাহফুজ জানান, নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে, দুই দফায় অভিযোগ করেও আমি কোন প্রতিকার পাইনি।

স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, গ্রামের বিদ্যালয় নির্মাণে এমন ভাবে যদি কাজ করা হয় তাহলে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে? এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আপনারা লিখুন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা (এলজিইডি) তত্বাবধানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এনএনজিপিএস প্রকল্পে আনুমানিক ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে চর যাত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দি¦তল ভবন নির্মাণে কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিনহা এন্টার প্রাইজের কর্ণধার নুরনবী সবুজ।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী খুরশিদ আলম’র ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাহফুজুল হোসাইন বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কোন তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, তথ্য প্রয়োজন হলে লিখিত আবেদন করতে বলেন তিনি।

নোয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মান সম্পন্ন কাজে আদায়ে কোন প্রকৌশলী ছাড় দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sharing is caring!