এনকে টিভি প্রতিবেদকঃ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফার্মাসি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ৩৩ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পংকজ চন্দ্র দেবনাথ।

 

শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা যাওয়ায় গত ৭ মে তিনি স্ত্রীসহ করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠান এবং একইদিনে রাতে মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারেন তাদের করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ।

 

ডাক্তারি পরামর্শ এবং কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে কিভাবে তার ২য় এবং ৩য় ফলো-আপে করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে, সেই কঠিন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

 

তিনি বলেন, ‘অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হবার পরের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছেন। যারা এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি (সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সুস্থ রাখুক) এবং যারা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে শেয়ার করছি।’

 

মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মাঠে থাকতে হয়েছে এবং নিয়মিত অফিস করতে হয়েছে। অসাবধানতাবশত কখন কিভাবে কার মাধ্যমে সংক্রমিত হলাম বুঝতেই পারিনি।

 

‘আমার স্ত্রীর হাল্কা জ্বর এবং কাশি হচ্ছিলো। ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে বলে। নিরুপায় হয়ে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণ করি।আমরা নিশ্চিত ছিলাম রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে এবং সেই সনদ দিয়ে আমার স্ত্রী অস্মিতাকে একজন ডাক্তার দেখাবো। ৭মে বাসায় এসে আমাদের দুজনের নমুনা নিয়ে যাওয়া হয় টেস্টের জন্য। রাতে যখন মোবাইলে বার্তা আসে যে আমরা দুজনেই করোনা পজেটিভ।

 

তখন মনে হলো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। কিংকর্তব্যবিমূড হয়ে বসে থাকলাম দুজনেই অনেকক্ষণ। কি করব, কার সাথে কথা বলব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ‘

 

কিন্তু বসে না থেকে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা গ্রহণ করি। এর মধ্যে,

 

1) Tab .Zimax 500mg(0+0+1) 7days

2) Tab.Tofen 1mg(0+0+1) 15days

3) Nasal drop.Rynex 0.05%(2 drops in each nose 3-4 times daily)

4) Tab.Xinc 20mg(2+2+2) 15days

5) Tab.Ceevit Ds(1+0+1) 5days

6) Tab.Esonix 20mg(1+0+1) (খাওয়ার আগে)

 

এছাড়াও আরও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করেছি যেগুলো সুস্থ অবস্থায়ও যা আমাদের সকলকেই অনুসরণ করা উচিত-

 

ক. মধু, আদা, লবঙ্গ, রসুন ও লেবুর রস মিশ্রিত চা/গরম পানি দিনে অন্তত ৪/৫ বার পান করেছি।

 

খ. দিনে অন্তত ৫ বার গরম পানির ভাঁপ নিয়েছি।

 

গ. ডিম, দুধ, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেয়েছি।

 

প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট রোদ পোহাতে হয়েছে।

 

ঘ. প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করেছি। (পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে)

 

এছাড়াও নির্ধারিত কিছু বিষয় মেনে চলেছি যা আমাদের সবাইকে মানা উচিত। যেমন- নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি ও কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সর্বোপরি ঘরে থাকা এবং নিরাপদে থাকা।

 

সকলের উদ্দেশ্যে বলব নির্ধারিত গাইডলাইন অনুসরণ করলে যে কেউ করোনা থেকে সহজেই মুক্তি পাবে।

 

একটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত তা হলো কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মনে সাহস রেখে ডাক্তারের চিকিৎসা অনুসরণ করে করোনা জয় করা সম্ভব। সত্যি কথা বলতে করোনা একটা আতঙ্ক ছাড়া কিছুই না। আতঙ্কিত হলেই সমস্যা।

 

আবারও নতুন উদ্যমে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো। আমার কাছে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারাটা গর্বের। সকলের দোয়া প্রত্যাশা করছি।ধন্যবাদ।

 

Sharing is caring!