এনকে টিভি ডেস্ক

এবার আমনের ভরা মওসুমেও ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। অপরদিকে মজুদের পরিমান একেবারে কমে অর্ধেকে নেমে গেছে। এর সুযোগ নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট হুহু করে বাড়াতে থাকে চালের দাম। গরিবের চাল নামে মোটা চাল ৫০ টাকা কেজি ছুয়ে যায়। চালের এ বাড়তি দাম দুর্ভোগে ফেলে সাধারণ মানুষকে। সারাদেশে এ নিয়ে হইচই পড়লে লাগাম টেনে ধরতে সরকার বাধ্য হয়ে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ।

 

একই সাথে কয়েক দফায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ লাখ টনের মতো চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরই অংশ বিশেষ তৃতীয়বারের মতো আরও ৯১ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে ৬৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। অনুমতির এই চিঠি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এভাবে সরকার তিন দফায় ৯২ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ২১ হাজার টন চাল আমদানির সুযোগ দিলো। এর সুফল পাচ্ছেন ভোক্তারা। কারণ এতে বাজারে কমছে চালের দাম। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমন ধানের এক লাখ পাঁচ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমি ক্ষতি হয়েছে। একারণে ধানের উৎপাদন ২৪ লাখ টন কম হয়েছে। কারণ আমনের উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছিলো ১৫৬ লাখ টনেরও বেশি। কিন্তু মোট উৎপাদন হয়েছে ১৩২ কোটি মে. টনের মতো। অন্যান্য বছরে আমন ধান উঠলে কমতে ধাকে ধান, চালের দাম। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেছে। ধান উঠা শুরু হলে এক হাজার ১০০ টাকা মণ পর্যন্ত দাম উঠে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার ২৬ টাকা কেজি বা ১০৪০ টাকা মণ ধান কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এই আমন ধান কেনা হবে দুই লাখ টন ধান। ৩৭ টাকা কেজি দরে ছয় লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি ৫০ হাজার টন আতব চাল কেনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সরকারের সাথে চুক্তি করে মিলমালিকরা দিচ্ছে না ধান, চাল। ২০ হাজার টনও কেনা সম্ভব হয়নি।

 

অপরদিকে গোডাউন পরিস্কার করার জন্য এবং করোনায় দুস্থদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার জন্য মজুদেও পরিমানও কমে অর্ধেকে নেমে গেছে। গত বারে ১০ লাখ টনের বেশি থাকলেও বর্তমানে ছয় লাখের নিচে নেমে গেছে। কম মজুদের অজুহাতে এক শ্রেণির অসাধু চক্র বেশি দামে চাল বিক্রি করছে বাজারে। এনিয়ে হই-চই পড়লে ২৭ ডিসেম্বর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঘোষণা দিয়েছেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। এজন্য ২৫ শতাংশ শুল্কে বেসরকারিভাবে বৈধ ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন এবং বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি করা হবে। বৈধ লাইসেন্সধারীরা আবেদন করবেন ১০ জানুয়ারির মধ্যে। বেসরকারিভাবে এই চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা বেসরকারিভাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিলো, এখন কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

 

এরই অংশ বিশেষ শর্তসাপেক্ষে গত ৩ জানুয়ারি এক লাখ পাঁচ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির জন্য ১০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ৫ জানুয়ারি সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে- এমন শর্তে দেশের আরও ১৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ২৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তৃতীয় দফায় আরও ৯১ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমতি পেল ৬৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি অনুমতির এই চিঠি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট বাসমতি নয় এমন সিদ্ধ চাল শর্তসাপেক্ষে আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে সরকার তিন দফায় ৯২ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ২১ হাজার টন চাল আমদানির সুযোগ দিলো।

 

চালে শুল্ক কমানো ও চালের আমদানি অনুমতি দেয়ার সুফল পেতে শুরু করেছে ভোক্তারা। বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। গতকাল সরকারি সংস্থা টিসিবির মতে এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কমেছে কেজিতে তিন টাকা বা সোয়া ৬ শতাংশ। কারণ গত ১৮ ডিসেম্বর মোটা চালের কেজি ছিলো ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি। যা গতকাল এই চালের দাম কমে বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৭ টাকা। একইভাবে মাঝারি পাইজাম চালের দামও কেজিতে চার টাকা বা প্রায় আট শতাংশ কমেছে। কারণ ১৮ ডিসেম্বরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি চাল বিক্রি হলেও গতকাল তা দাম কমে ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়। তবে চিকিন চালের দাম সেই তুলনায় কমেনি। তা প্রায় ৫ শতাংশ কমে ৫৫ থেকে ৬৪ টাকা কেজি বিক্রি হয়। যা মাস আগে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়। বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও কৃষিমার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আগের চেয়ে  কম দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।

 

Sharing is caring!